Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বাংলা মহাকাব্যের ধারায় মধুসূদন, হেমচন্দ্র ও নবীনচন্দ্রের অবদান ও সার্থকতা মূল্যায়ন কর

কাব্যের মধ্যে পূর্বাপর সঙ্গতি ও ধারাবাহিকতাপূর্ণ কোনও কাহিনী পরিবেষণ করলেই তাকে আখ্যায়িকা-কাব্য’-রূপে চিহ্নিত করা হয়। আর আখ্যায়িকা কাব্য যখন কোনও মহৎ জাতীয় জীবনাদর্শের আধার হয়ে ওঠে, তার বর্ণনায়, চিত্রকল্পে ও চরিত্র-চিত্রণে সেই ভাবসমুন্নতি উদ্ভাসিত হয়, তখনই সেই রচনা মহাকাব্যের মর্যাদা অর্জন করে। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবিরা বায়ুরন, মুর, স্কট প্রভৃতির কাহিনী-কাব্যের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। আখ্যায়িকা কবিতার রােমান্টিক কল্পনা বৈচিত্র্য, কাহিনীরস ও নাটকীয়তা প্রভৃতি তারা কবিত্বের গৌরবরূপে অনুভব করেছিলেন। আখ্যায়িকা কাব্য ও মহাকাব্যকে দেশাত্মবােধ-প্রকাশের উপযুক্ত মাধ্যমরূপেও তারা অনুভব করে তাদের আদর্শে বাংলা ভাষায় আখ্যায়িকা ও মহাকাব্য-রচনায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

ইংরেজি-শিক্ষিত প্রথম বাঙালি কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের শিষ্য এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েও শেপীয়র, স্কট-বায়রন, বিশেষতঃ টমাস মুরের অনুসরণে পাশ্চাত্ত্য রােমান্টিক কবি-কল্পনার প্রয়ােগে বাংলা কাব্যে আধুনিক ধারা প্রবর্তন করলেন। অবাস্তব কাল্পনিক পরিবেশে প্রণয়লীলার পরিবর্তে তিনি ঐতিহাসিক পটভূমিকায় দেশাত্মবােধকে কাব্যের বিষয়বস্তুরূপে গ্রহণ করেছেন।

টডের রাজস্থান কাহিনী থেকে বিষয়বস্তু সংগ্রহ করে রঙ্গলাল বাংলা সাহিত্যের প্রথম আখ্যানকাব্য ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ (১৮৫৮) রচনা করেছিলেন। ইতিহাসলব্ধ বিষয়বস্তু, প্রকৃতি বর্ণনা ও রােমান্টিক দেশপ্রেম গতানুগতিক কবিতার জীর্ণ আধারে নতুন রস সঞ্চারিত করেছে। রানা ভীমসিংহের ক্ষত্রিয়দের প্রতি উৎসাহ বাণী ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়’ এদেশে দেশাত্মবােধের উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলেছিল। রঙ্গলালের দ্বিতীয় আখ্যানকাব্য ‘কর্মদেবী’র (১৮৬২) চার-সর্গ সম্বলিত কাহিনীও রাজপুত-ইতিহাস থেকে সংগৃহীত। নায়ক সাধুর চরিত্র-পরিকল্পনায় দেশপ্রেমের আদর্শের ছবি স্পষ্টতরভাবে অঙ্কিত। তৃতীয় কাব্য ‘শূরসুন্দরী’র কাহিনীরও ভিত্তি রাজপুত ইতিহাস। কাব্যটি সম্পূর্ণরূপেই বর্ণনাত্মক। রঙ্গলালের তৃতীয় আখ্যানকাব্য ‘কাঞ্চীকাবেরী’র (১৮৭৯) বিষয়বস্তু উড়িষ্যার ইতিহাসের একটি রােমান্টিক কাহিনী। এই কাহিনীর কাঠামাে কবি পেয়েছিলেন পুরুষােত্তম দাসের ওড়িয়া কাব্যে। কাহিনীর আধুনিক রূপ রচনার জন্য তার একটু ঐতিহাসিক ভূমিকা দিয়েছেন এবং কাঞ্চীর যুদ্ধ রাজপুত যুদ্ধের আদর্শে বর্ণনা করেছেন। ‘কাঞ্চীকাবেরী’র রােমাণ্টিক বিষয়বস্তুতে ভক্তিরস প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু রঙ্গলাল কাব্য-প্রকরণে প্রাচীন কাব্যধারারই অনুসরণ করেছেন, ভাষা, ছন্দ ও প্রকাশকলায় তিনি কোনও মৌলিকতার পরিচয় দিতে পারেন নি। তাঁর ‘কর্মদেবী’ প্রকাশের পূর্বেই বাংলা কাব্যসাহিত্যে মধুসূদন আবির্ভূত হয়েছিলেন, তার ফলে রঙ্গলালের কবিখ্যাতি স্নান হয়ে পড়ে।

প্রকৃতপক্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্তই আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপস্রষ্টা। তিনি তাঁর ইয়ােরােপীয় সাহিত্যের বিস্তৃত ও গভীর জ্ঞানে, দুঃসাহসিক কবিপ্রতিভার প্রবল শক্তিমত্তা ও আত্মবিশ্বাসে বাংলা কবিতাকে একটি সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে মুক্ত করে আধুনিক জীবনচেতনার বৃহত্তর জগতে ব্যাপ্তির ঐশ্বর্য দিয়েছেন। এই জীবনবােধ ও প্রতিভার দুর্জয় শক্তিতেই নতুন জীবনাদর্শের উপযুক্ত আধার নির্মাণের তাগিদে মধুসূদন প্রচণ্ড দুঃসাহসে বাংলা কাব্যে দীর্ঘকাল প্রচলিত পয়ারে চরণান্তিক মিল এবং শ্বাসযতি ও অর্থতির যান্ত্রিক ঐক্যবন্ধনকে ভেঙে মিল্টনের ‘ব্ল্যাঙ্ক ভার্সে’র অনুসরণে ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর ১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত বর্ণনাময় কাব্য তিলােত্তমাসম্ভব’কে মধুসূদন নিজেই Epic ling বা মহাকাব্যিকা’ বলেছেন। এই আখ্যায়িকা কাব্যটি মধুসূদনের শিক্ষানবিশি পর্বের রচনা। ত্রুটিবিচ্যুতি-সত্ত্বেও রচনাটিতে মধুসূদনের শক্তির পরিচয় মেলে।

১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ মধুসূদন তার নবজাগরণ-যুগলব্ধ নতুন জীবনবােধের প্রকাশে রামায়ণ কাহিনীর রূপান্তর ঘটিয়েছেন ও দুরাচারীরূপে চিরনিন্দিত রাক্ষসরাজ রাবণকে তাঁর কাব্যের নায়করূপে গ্রহণ করে তার মধ্যে সর্ববন্ধনমুক্ত, আত্মশক্তিতে বলিষ্ঠ, আত্মমর্যাদা সচেতন আধুনিক মানুষের পৌরুষদীপ্ত ব্যক্তিত্ব ও জীবনাদর্শকে রূপায়িত করেছেন। রাম তার কাছে ভীরু, দুর্বল, প্রতি পদে দেবতাদের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল; বিভীষণের ধর্মবােধহীন স্বার্থপরতা ও স্বদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা তাঁর কাছে অমার্জনীয় অপরাধ। মানবহৃদয়ের সর্বপ্রকার অনুভূতির প্রকাশে অমিত্রাক্ষর ছন্দের শক্তি সংশয়াতীতরূপে প্রমাণিত। হােমরের ইলিয়দ, ভার্জিলের এনেইদ, দান্তে, তাসসাে ও মিল্টনের মহাকাব্য, বাল্মীকির রামায়ণ ইত্যাদি রচনা থেকে ভাব, বিষয়বস্তু ও প্রকাশকলা আহরণ করে মধুসূদনই ভাষায় যথার্থ মহাকাব্য রচনায় সফল হয়েছিলেন।

হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের ‘বীরবাহু কাব্য’-এর (১৮৬৪) বিষয় কাল্পনিক। কাব্যটিতে রঙ্গলালের প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। বীরবাহুর কাহিনীবিন্যাসে সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও সংহতির অভাব, তবে কোথাও কোথাও বর্ণনার লালিত্য আছে। কাব্যকাহিনীতে রূপকথার মত অনেক অসম্ভব ঘটনা স্থান পেয়েছে। তবে বাংলাদেশের শিক্ষিতদের মধ্যে সদ্যজাগ্রত দেশাত্মবােধ এই কাব্যে প্রবল ভাবােচ্ছাসে প্রকাশিত হয়েছিল, সেইদিক থেকে তার মূল্য স্বীকার্য। হেমচন্দ্রের প্রধানতম ও সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত রচনা বৃত্রসংহার মহাকাব্য (প্রথম খণ্ড ১৮৭৫, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৭৭)।

ইন্দ্রকে পরাজিত করে বৃত্রের স্বর্গ অধিকার, ইন্দ্র ও শচীর দুঃখদুর্গতি ভােগের পর দধীচির অস্থিনির্মিত বজ্রে ইন্দ্রের বৃত্রবধ ও স্বর্গ-উদ্ধার এই মহাকাব্যের বিষয়বস্তু। কাহিনীর কাঠামােটুকুই শুধু পৌরাণিক, বেশির ভাগ অংশই কবির নিজস্ব কল্পনা, কতকটা ইংরেজি কাব্যের অনুকরণ। বৃত্র- সংহার-এর কথাবস্তুতে ও পটভূমিতে যে মহাকাব্যোচিত বিশালতা আছে, মেঘনাদবধ কাব্যে তা দেখা যায় না।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর কৈশাের বয়সের সমালােচনায় ‘মেঘনাদবধে’ নয়, বৃত্রসংহারেই মহাকাব্যের ভাবসমুন্নতি নির্দেশ করেছিলেন ঃ “স্বর্গ উদ্ধারের জন্য নিজের অস্থিদান এবং অধর্মের ফলে বৃত্রের সর্বনাশ যথার্থ মহাকাব্যের বিষয়। কিন্তু সমগ্র কাহিনীটি শিথিল, হেমচন্দ্র তাকে মহাকাব্যের সংহতি দিতে পারেন নি। তার চরিত্র চিত্রণও অত্যন্ত দুর্বল।”

ডাঃ সুকুমার সেন যথার্থই বলেছেন : “বৃত্রসংহারে অনেকগুলি ভালােমানুষী চরিত্র আছে বটে কিন্তু যথার্থ মহৎ চরিত্র নাই। একমাত্র মহৎ চরিত্র দধীচি কাব্যে উপেক্ষিতই রহিয়া গিয়াছে। দেবতাচরিত্রগুলিতে ব্যক্তিত্বের পরিচয় গােচর নয়। বৃত্রের ভূমিকায় বৈদিক ও পৌরাণিক ইন্দ্রশত্র অসুরের গম্ভীর মহিমা পরিস্ফুট নয়।…… বৃত্রসংহারের নায়ক শিবের বরপ্রাপ্ত ভক্তমাত্র, বৃত্রের সম্বল চন্দ্রশেখরের দয়া। ভাগ্যের উপর অপরিসীম বিশ্বাস। ….এইখানে হেমচন্দ্রের বৃত্র মধুসূদনের রাবণের তুলনায় নিষ্প্রভ। ঐন্দ্রিলার ভূমিকায় অসুর মহিষীর দৃপ্ত তেজ ফুটে নাই, ফুটিয়াছে রূপকথার সুয়ােরাণীর হিংসা ও অভিমান।”

নবীনচন্দ্র সেনের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ ঐতিহাসিক গাথাকাব্য। ইংরেজদের লেখা ইতিহাসে সিরাজ চরিত্র কলঙ্কের কালিমালেপনে আচ্ছন্ন। নবীনচন্দ্র তার ওপরে নির্ভর করে সিরাজকে নায়কত্বের মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত হয়েছেন। তাঁর কাব্যে মােহনলালই প্রাধান্য পেয়েছে, তার মধ্য দিয়েই দেশাত্মবােধ অভিব্যক্ত। নবীনচন্দ্র ‘পলাশীর যুদ্ধে’ অনেক স্থানেই বায়রনের Childe Harold-এর যুদ্ধ বর্ণনা পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, এমন কি কোথাও কোথাও তার আক্ষরিক অনুবাদ পর্যন্ত করেছেন। ‘পলাশীর যুদ্ধে’র কাব্যমূল্য বিশেষ কিছু নেই, তবে তার দেশপ্রেমের ভাবােচ্ছাস সমকালীন পাঠকদের প্রভাবিত করেছিল। নবীনচন্দ্রের ‘ক্লিওপেট্রা’ একটি দীর্ঘ বর্ণনামূলক কবিতা মাত্র, কবি দ্বিচারিণী ক্লিওপেট্রার প্রতি পাঠকের সহানুভূতি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন, রচনাটির বিশেষত্ব মাত্র এইটুকুই। ‘রঙ্গমতী’ (১৮৮০) স্কুটের আদর্শে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য, কাল্পনিক কাহিনীর পটভূমি চট্টগ্রামের রাঙামাটি অঞ্চল, শিবাজীর প্রসঙ্গ সন্নিবিষ্ট করে কবি রচনাটিকে স্বাদেশিকতার গৌরব দিতে চেয়েছেন। এই রচনাটির কাব্যমূল্যও অকিঞ্চিৎকর।

নবীনচন্দ্র সেন তার ত্রয়ী কাব্যে—’রৈবতক’ (১৮৮৬), ‘কুরুক্ষেত্র’ (১৮৯৩) ও ‘প্রভাস’ (১৮৯৬)-এ ঐক্যবদ্ধ অখণ্ড ভারতবর্ষের জাতীয়তার আদর্শের মূর্তি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। বিষয়বস্তুতে মহাকাব্যোচিত বিশালতা লক্ষণীয়। তিনটি কাব্যের কেন্দ্রীয় ঘটনা যথাক্রমে সুভদ্রাহরণ, অভিমন্যবধ ও যদুবংশ ধ্বংস। নিষ্কাম ধর্ম ও নিষ্কাম প্রেমের সূত্রে আর্য-অনার্যের ঐক্যবন্ধন এবং অথণ্ড হিন্দুসংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা। এই উদ্দেশ্যসাধনেই নায়ক শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। তার সহায় ছিল অর্জুনের বীরত্ব, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের মনীষা, সুভেদ্রার প্রীতি ও শৈলজার প্রেম। দুর্বাসার অকারণ প্রতিহিংসা ও অভিমান এবং বাসুকির সংশয় ছিল তার বিরােধী শক্তি। কল্পনা ও আবেগের মাত্রাহীন অসংযম, রচনারীতিতে শৈথিল্য, সুলােচনার অসংযত কৌতুকচাপল্য ও লঘুতা, চরিত্র-চিত্রণে দুর্বলতা প্রভৃতি ত্রয়ী-কাব্যের মহাকাব্যের গৌরব অর্জনে গুরুতর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিছক আখ্যায়িকা কাব্য হিসেবেও ঘটনা ও চরিত্রের টানাপােড়েন তাদের সংহত রূপ দিতে কবি ব্যর্থ হয়েছেন।

নবীনচন্দ্র অবতার মহাপুরুষদের জীবন নিয়ে কয়েকটি আখ্যায়িকা-কাব্য লিখেছিলেন ও যীশুখ্রীষ্টের জীবনী নিয়ে ‘খৃষ্ট’ (১২৯৭), বুদ্ধের জীবনী ‘অমিতাভ’ (১৩০২) ও শ্রীচৈতন্যের নবদ্বীপ-লীলাকাহিনী ‘অমৃতাভ’ (১৩১৬); কোনওটির কাব্যমূল্যই উল্লেখযােগ্য নয়।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.