Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বৈষ্ণব পদাবলির কবি জ্ঞানদাস সম্পর্কে লিখুন

জ্ঞানদাস : কবি জ্ঞানদাস (শ্রীমঙ্গল, মঙ্গল ঠাকুর বা মদনমঙ্গলা নামেও পরিচিত ছিলেন) একজন মধ্যযুগীয় বাংলা কবি। তাঁর জন্ম | ১৫৬০ সিউড়ী ও কাটোয়ার অন্তবর্তী কাঁদরা নামক গ্রামে মঙ্গলাখ্য বিপ্রবংশে। তিনি ষোল শতকের পদাবলী সাহিত্যের একজন সেরা কবি। তাঁর সুনাম চন্ডীদাস বা বিদ্যাপতির চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাঁর জীবন সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানা জায় না। তিনি ছিলেন ভক্ত বৈষ্ণব সে জন্য তার পদে ভক্তের আবেগ বেশি পাওয়া যায়। সেকালের বটপত্রে জ্ঞানদাস সম্পর্কে সামান্য কিছু তথ্য আছে।

শ্রীচৈতন্যের জীবনী লিখেছেন কৃষ্ণদাস কবিরাজ। তার চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে জানা যায়, জ্ঞানদাস নিত্যানন্দ শাখার একজন বৈষ্ণব। নিত্যানন্দ ছিলেন চৈতন্যের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং বাংলার বৈষ্ণব সমাজের খুব বড় নেতা। জ্ঞানদাসের অনেক পদে নিত্যানন্দের ভক্তি ও প্রশংসা আছে। পদগুলো পড়লে মনে হয় জ্ঞানদাস নিত্যানন্দকে অনেক কাছ থেকেই দেখেছিলেন। নিত্যানন্দের মৃতুর পর তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী জাহ্নবা দেবী বৈষ্ণব সমাজের নেত্রী হয়েছিলেন। জ্ঞানদাস ছিলেন জাহ্নবা দেবীর শিষ্য। চৈতন্যের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে বৈষ্ণব গ্রন্থগুলো প্রচারের দায়িত্ব যাঁরা নিয়েছিলেন, নরোত্তম দাস (আনুমানিক ১৫৪০-১৬১০) তাঁদের মধ্যে একজন। তিনি রাজশাহী জেলার খেতুরি নামক স্থানে এক মহা উৎসবের আয়োজন করেছিলেন এবং উৎসবে বাংলাদেশের সব বৈষ্ণবকে ডেকেছিলেন। সেই মহামেলায় জ্ঞানদাসও অংশ | নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তখন নাকি তাঁর বয়স প্রায় পঞ্চাশ বছর। জ্ঞানদাস বলরাম দাস, গোবিন্দ দাস প্রমুখ বৈষ্ণব কবিদের সমসাময়িক হতে পারেন।

কারো মতে, তাঁর জন্ম ১৫৩০ সালে; কারো মতে ১৫২০ থেকে ১৫৩৫ সালের মধ্যে। জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাঁদড়া গ্রামে। নিত্যানন্দের জন্মস্থান একচক্রা বা একচাকা গ্রামের কাছাঁকাছি এই কাঁদড়া গ্রাম। এখানে জ্ঞানসাসের একটি মঠ আছে। জ্ঞানদাসের মৃত্যু উপলক্ষে প্রতিবছর পৌষ মাসের পূর্ণিমার সময় এই জায়গায় মেলা হয়। জ্ঞানদাস অবিবাহিত ছিলেন বলে জানা যায়। অন্যমতে, তিনি বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর একটি পুত্র ছিল।

জ্ঞানদাস একজন উৎকৃষ্ট পদাকার ছিলেন। তাঁর কিছু স্মরনীয় পদ আছে। যেমন, রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর, কিংবা সুখের লাগিয়ে এ ঘর বান্ধিলু ইত্যাদি। এই সব পদ বৈষ্ণব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। পদাবলীর গুণ ও মান বৃদ্ধিতে জ্ঞানদাসের একটি বিশিষ্ট ভূমিকা আছে। ষোল শতক পদাবলীর স্বর্ণযুগ। জ্ঞানদাস এই স্বর্ণযুগের কবি। ভক্তের অনুভূতিকে কবিতায় প্রকাশ করার অপূর্ব প্রতিভা তাঁর মধ্যে ছিল।

শব্দব্যবহার ও ভাষাভঙ্গি একই রকম বলে জ্ঞানদাসকে চন্ডীদাসের অনুসারী বলা হয়। অকৃত্রিম সহজ রচনারীতির দিক থেকে চন্ডীদাসের সঙ্গে তাঁর মিল অবশ্যই আছে। কিন্তু জ্ঞানদাস একজন সতন্ত্র কবি। আধুনিক কালের গীতিকবিতার বৈশিষ্ট তাঁর পদে পাওয়া যাবে।

জ্ঞানদাসের নামে প্রায় শ’দুয়েক পদ চালু আছে। ব্রজবুলিতেও তিনি অনেক পদ রচনা করেছেন। তবে তাঁর বাংলা পদগুলো ব্রজবুলির পদের তুলনায় অনেক ভাল। জ্ঞানদাসের একটি বিখ্যাত পদ নিম্নরূপ :

“রূপের পাথারে আঁখি ডুবিয়া রহিল যৌবনের বনে মন হারাইয়া গেল। ঘরে যাইতে পথ মোর হইল অফুরান

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর

প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।”

জ্ঞানদাস সঙ্গীত বিষয়েও একজন বিশেষজ্ঞ। একালে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল যেমন নিজেদের লেখার গানে সুর দিয়েছেন, সেকালে জ্ঞানদাসও একই কাজ করেছেন। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে জ্ঞানদাস বাংলা সাহিত্যে প্রথম ব্যক্তি, যিনি গান লিখে সুর দিয়েছেন। কীর্তন গানেও তাঁর দক্ষতা ছিল বলা হয়। কীর্তনের নতুন ঢঙ তিনি তৈরি করেছিলেন।

জ্ঞানদাসের কিছু পদ ও তার পর্যায়

(১) রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর (পূর্বরাগ

(২) আলো মুঞি জান না (পূর্বরাগ )

(৩) দেইখ্যা আইলাম তার (পূর্বরাগ )

(৪) তুমি কি জান সই কাহ্নুর পিরিতি (পূর্বরাগ

(৫) পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার (পূর্বরাগ

(৬) কানু অনুরাগে হৃদয় ভেল কাতর (অভিসার)

(৭) মেঘ যামিনী অতি ঘন আন্ধিয়ার (অভিসার)

(৮) শ্যাম অভিসারে চলু বিনোদিনী রাধা (অভিসার)

(৯) সুখের লাগিয়া এ ঘর বান্ধিনু (আক্ষেপানুরাগ )

(১০) বঁধু তোমার গরবে গরবিনী আমি (নিবেদন)

আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

বৈষ্ণব পদাবলী কী? বৈষ্ণব পদাবলী বিভিন্ন পর্যায় ও বৈষ্ণব পদাবলীর তত্ত্ব গুলো আলোচনা করুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি বিদ্যাপতি সম্পর্কে লিখুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি চণ্ডীদাস সম্পর্কে লিখুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি গোবিন্দ দাস সম্পর্কে লিখুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি জ্ঞানদাস সম্পর্কে লিখুন

বাংলা সাহিত্যে চণ্ডীদাস সমস্যা আলোচনা করুন

বৈষ্ণব পদাবলি সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

প্রমথ চৌধুরী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

প্রমথ চৌধুরী (৭ আগস্ট ১৮৬৮ — ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬) বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি প্রাবন্ধিক, কবি ও ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান

Read More
সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার

Read More
গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার সঠিক সমাধান ও অনুসন্ধানই হলো গবেষণা। গবেষণার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা এবং মানুষের

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.