ধর্মমঙ্গল ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্যসূচক কাব্যধারা। ধর্ম অনার্য দেবতা এবং সূর্য কিংবা বুদ্ধের প্রতিরূপ হিসেবে কল্পিত। প্রাচীন বঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে এঁর উদ্ভব ও পূজা সীমিত ছিল। ধর্মপূজা দীর্ঘকাল অন্ত্যজ শ্রেণীর মধ্যে প্রচলিত থাকায় সতেরো শতকের পূর্ব পর্যন্ত এতে কোন আর্যপ্রভাব পড়েনি এবং কোন আর্যপুরাণে ধর্মের কথা পাওয়াও যায় না। সতেরো শতকের পরে যুগপরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে ধীরে ধীরে পৌরাণিক ধর্মাদর্শের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে ধর্মঠাকুর পৌরাণিক দেবতার পর্যায়ভুক্ত হন।
ধর্মমঙ্গলের প্রচলিত কাহিনী লাউসেনের সংগ্রামী জীবনের কথা। রামপালের পুত্র যখন গৌড়ের রাজা তখন তাঁর শ্যালক মহামদ পাল ছিলেন রাজমন্ত্রী। মহামদের ভগ্নী রঞ্জাবতীর সঙ্গে বৃদ্ধ সামন্তরাজ কর্ণসেনের বিবাহ হয়। এদের পুত্রই লাউসেন। লাউসেনের সঙ্গে মহামদ ও ইছাই ঘোষের বিভিন্ন সময়ে দ্বন্দ্ব, দ্বন্দ্বে ধর্মের কৃপায় লাউসেনের বিজয়, ধর্মের সঙ্গে বিবাদের ফলে মহামদের কুষ্ঠব্যাধি, লাউসেনের অনুরোধে ধর্ম কর্তৃক ব্যাধির নিরাময় এবং সবশেষে ধর্মপূজার মধ্য দিয়ে কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে।
ধর্মমঙ্গলের আদি কবি ময়ূর ভট্ট। তাঁর কাল খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক বা এর কাছাকাছি অনুমান করা হয়, কিন্তু তাঁর কাব্যের নিদর্শন পাওয়া যায়নি। তাঁর পরের কবি রূপরামের কাল ষোলো শতক এবং মাণিকরাম গাঙ্গুলির কাল সতেরো শতকের মধ্যভাগ ধরা হয়। ধর্মমঙ্গলের অপর একজন কবি সীতারাম দাসের কাব্য রচনার কাল ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দ মনে করা হয়। ধর্মমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তী। তাঁর কাব্যের রচনাকাল ১৭১১ খ্রিস্টাব্দ। কাব্যটি বীররসপ্রধান। এরপর আর যাঁরা ধর্মমঙ্গল রচনা করেছেন তাঁরা হলেন সহদেব (১৭৩৫), নরসিংহ (১৭৩৭), হৃদয়রাম (১৭৪৯), গোবিন্দরাম (১৭৬৬?) প্রমুখ।
ধর্মমঙ্গলে রাঢ়ের জনজীবনের যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা অভিনব এবং তাতে বাঙালির জাতীয় মানসের এক নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। অন্যান্য মঙ্গলকাব্যের মতো এতে বাঙালি চরিত্র মেরুদন্ডহীন ও দৈবনির্ভররূপে চিত্রিত হয়নি, বরং রাজনৈতিক সঙ্ঘাত ও দেশরক্ষার উদ্দেশ্যে দৃঢ়সংকল্প এবং অনমনীয় প্রতিশোধপরায়ণরূপে চরিত্রগুলি নির্মিত হয়েছে। মনসামঙ্গল ও চন্ডীমঙ্গলে কাহিনীর মূলকেন্দ্রে রয়েছে দেবতা, মানুষ সেখানে অনুষঙ্গ মাত্র; কিন্তু ধর্মমঙ্গলের মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মানুষকে কেন্দ্র করেই।
এখানে আছে সামাজিক সঙ্ঘাত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, দৈবঘটনার প্রাধান্য এখানে কম; বরং দৈবঘটনাকেই এখানে আনুষঙ্গিক বলা যায়। তৎকালীন রাঢ়ের রাজনৈতিক জীবনযাত্রা এবং সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষের গৌরবময় দেশাত্মবোধ ধর্মমঙ্গলকে অন্যান্য মঙ্গলকাব্য থেকে পৃথক করেছে এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রেও একে এক বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছে।
আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
মঙ্গলকাব্য কী? মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ও সময়কাল, মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক প্রেক্ষাপট
মঙ্গলকাব্যের বৈশিষ্ট্য বা মঙ্গলকাব্যের লক্ষণ গুলো লিখ
মনসামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
শিবায়ন বা শিবমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
মনসামঙ্গল কাব্যের বিষয়বস্তু ও মনসামঙ্গল কাব্যের কবি পরিচয়
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিজয়গুপ্ত সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি নারায়ণদেব সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কবি বিপ্রদাস পিপলাই সম্পর্কে লিখুন
মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনী ও শিল্পমূল্য বিচার! মনসামঙ্গল কাব্যের গুরুত্ব বিচার
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সম্পর্কে লিখুন
অন্নদামঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র
অন্নদামঙ্গল কাব্যের কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর সম্পর্কে লিখুন
ধর্মমঙ্গল কাব্যের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, কাহিনির সংক্ষিপ্তসার, শিল্পমূল্য বিচার ও চরিত্র