পোস্ট মডার্নিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো : পোস্ট মডার্নিজম হচ্ছে যা আধুনিক নয় এবং যা পৃথিবীতে আমাদের চতুর্দিকে ঘটে যাচ্ছে আমাদের বিশ্বকে বা মহাবিশ্বকে ধরে রাখছে বা বিনষ্ট করছে তাকেই রূপদান করার সামগ্রিক প্রচেষ্টা।পোস্ট মডার্নিজমের বাংলা উত্তর আধুনিকতাবাদ। এর সরল অর্থ আধুনিকতার উত্তর বা পরবর্তী আর মোটাদাগে পোস্টমডার্নিজমের স্বরূপ হচ্ছে আধুনিকাতার কিছু সিদ্ধান্ত ও কাজকর্ম আধিপত্ববাদ,কর্তত্ববাদ,ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, ভোগবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে বিরোধিতা করে মানুষের অভিজ্ঞতা ও স্বাতন্ত্র্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবাদী নতুন একটি আন্দোলন।
১. কোন কিছুকে আদর্শ ধ্রুব জেনে বা শিল্পসৃষ্টির কোন উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে উত্তর আধুনিক লেখকরা লিখেন না। তাদের কোন সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নেই। তাদের কাছে জীবন ক্ষণিক এবং ভঙ্গুর- জীবনের নেই কোন স্থায়িত্ব। তাই জীবনকে নিয়ে তারা খেলতে উৎসাহী। জীবন তাদের কাছে খেলার সামগ্রী। যুক্তিহীন, তাৎপর্যহীন, এলোমেলো, বন্ধুর, আকস্মিক বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। সাহিত্য রচনায় আধুনিকতাবাদীদের মতো তারা ততো সিরিয়াস নয়।
২.সাধারণত লেখকগণ কোন না কোন রীতিকে মান্য করেন, অনুসরণ করেন। উত্তর আধুনিক সাহিত্যিকগণ বিশেষ কোন শ্রেণিকে বা শ্রেণি কাঠামো, ফর্ম বা রীতিকে একনিষ্ঠভাবে মান্য করেন না। তাদের কাছে চূড়ান্ত বলে কিছু নেই-নেই শাশ্বত বা ব্যাখ্যাহীন বা প্রশ্নহীন বলে কোন কিছু। সন্দেহ করে সবকিছুকে, বিকল্পহীনতায় আস্থা নেই। প্রথাবদ্ধ পথ ভেঙে তারা নির্মাণ করে অসংখ্য গতিময়, মুক্ত ও স্বাধীন পথ ।
৩. সাহিত্য যুক্তিকে মান্য করে। আধুনিকতা যুক্তিবাদকে বিশেষভাবে মান্য করে । কিন্তু পোস্ট মডার্নিজমের যুক্তি ও যুক্তির শাসন মানতে চায় না। তারা আত্মমগ্ন, প্রথাবিরোধী। গোঁড়ামি ও কর্তৃত্ববাদ থেকে মুক্ত থাকতে আগ্রহী। তারা রহস্যময়তায় বিশ্বাসী নন। তাদের রয়েছে একধরনের খোলা নন্দনতাত্ত্বিক নিরীক্ষা প্রবণতা।
৪. সাধারণত লেখকগণ কী লিখলে কী হবে-তা নিয়ে ভাবেন কিন্তু উত্তর আধুনিক লেখকগণের উচ্চারণ: ফলের আশায় আমরা কাজ করি না এবং করাও উচিত নয়। তারা হয়তো একটি লেখা শুরু করলেন, লেখাটি শেষ পর্যন্ত কী ধরনের শিল্পরূপ হিসেবে দাঁড়াবে, তা নিয়েও ভাবেন না। তাদের কাজ প্রক্রিয়াপ্রধান, উদ্দেশ্য বা ফলাফল প্রধান নয় ।
৫. ব্যঙ্গোক্তি, হালকা ও ভিন্নধরনের হাস্যরস এই শ্রেণির লেখকদের উপজীব্য। ব্যঙ্গোক্তি হাস্যরস আগেও সাহিত্যে ছিলো কিন্তু তাদের লেখায় তা বিশেষ বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক চিহ্ন (হলমার্ক) হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক কঠিন, শক্ত বা গম্ভীর কথাও তারা হাসির ছলে বলে ফেলেন-যা পাঠককে ধাক্কা দেয়, সচেতন করে।
৬. লেখক হিসেবে অধিকাংশ সময়ই তারা নির্লিপ্ত থাকেন। অনেক বড় বিষয় যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ, আধিপত্যবাদ, শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রনীতির নামে কূটচাল, মানবতা বা সভ্যতা রক্ষার নামে মানবতাবিরোধী হিংস্র আচরণ, শান্তির নামে বর্বরতা ইত্যাদিকেও তারা দূর থেকে নিরাসক্তভাবে দেখেন এবং বর্ণনা করেন। পড় এই শ্রেণির লেখকগণ পূর্বসূরিদের রচনা থেকে উপাদ্রান, উদ্ধৃতি গ্রহণ করে। তাদের বক্তব্য তৈরি করেন। জোড়া দিয়ে দিয়ে দিয়ে গল্প বলেন। পূর্বসূরিদের রচনা থেকে উপাদান, উদ্ধৃতি গ্রহণ করে গল্প বলার ভঙ্গিটাকে তারা একটা রীতি ( style) ) হিসেবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন ।
৭. উত্তর আধুনিক লেখকদের লেখাকে পাঁচমিশালি সৃষ্টি নামে অভিহিত করেছেন অনেক গবেষক। কারণ তারা সচেতনভাবে অন্যের স্টাইলকে অনুসরণ করেন, মিশিয়ে দেন হরেক রকমের উপাদান, তত্ত্ব ও তথ্য। তারা অবলীলায় ব্যবহার করেন কথ্যরীতি, সদ্য গজিয়ে ওঠা কোন চলতি শব্দ-যা এখনো সবজনীন হয়ে ওঠেনি। যেমন (বাংলা ভাষার কয়েকটি শব্দ: গ্যাঞ্জাম, পেজগি, গিরিঙ্গি)।
আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
পোস্ট মডার্নিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন
পোস্ট মডার্নিজমের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ