Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

উত্তর উপনিবেশিকতার প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয় দিন

উত্তর-ঔপনিবেশবাদ তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন তাষিক হলেন, ফ্রান্স ফানো, হোমি জাহাঙ্গীর ভাঙা, এডওয়ার্ড সাঈদ, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রমুখ।

নিম্নে তাদের মতবাদ ও কাজ নিয়ে আলোচনা করা হলো:

এসব তাত্বিকদের কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক উদ্যোগ এবং পশ্চিমা বিরোধী মনোভাব ছিল। নিজ ও অপরের মধ্যকার প্রশ্ন পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের দূর অভিসন্ধির প্রাচ্যতত্ত্ব প্রয়াস উত্তর ঔপনিবেশিক তথ্যচর্চার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

১. ফ্রান্স ফানো (১৯২৫- ১৯৬১)

ফ্রান্স ফনো (Frantz Fanon), যিনি ইব্রাহিম ফ্রৎস ফানোঁ নামেও পরিচিত। তিঁনি ছিলেন ফরাসি উপনিবেশ মার্তিনিকের একজন ফরাসি পশ্চিম ভারতীয় মনোবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক দার্শনিক। তাঁর কাজ উত্তর-ঔপনিবেশিক অধ্যয়ন, সমালোচনা তত্ত্ব ও মার্ক্সবাদের মতো ক্ষেত্রসমূহে প্রভাবশালী। একজন বুদ্ধিজীবী হওয়ার পাশাপাশি ফানোঁ ছিলেন একজন রাজনৈতিক উগ্রপন্থী, সর্বাফ্রিকানবাদী ও মার্ক্সীয় মানবতাবাদী যাঁর মূল সংশ্লিষ্টতা ছিল উপনিবেশের মনোবিকারবিজ্ঞান এবং বি-উপনিবেশায়নের মানবিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিণতি বিষয়ে।

ফানো উপনিবেশবাদের কঠিন মনুষ্যত্ব গত পরিনাম উপস্থাপন করেন, যা কালো মানুষদের সাদা স্বভাবে অভিযোজিত হতে প্ররোচিত করে এবং হীনমন্যতায় আবিষ্ট হয়ে উপনিবেশ ভাষা রপ্ত করতে মনোযোগী হয় এবং নিজস্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাস দাশিত করে। ফাঁনো উপনিবেশবাদের আওতায় উপনিবেশিতদের তিনটি অবয়ব চিহ্নিত করেন। অবয়বগুলো হলো-

১. উপনিবেশক কর্তৃক উত্থাপিত সংস্কৃতি মডেলে আত্মীকরণ।

২. এর প্রতিক্রিয়ায় মনোজাগতিকভাবে আত্মপ্রশ্ন উত্থাপন এবং নিজস্ব জাতীয় সত্তা অনুসন্ধানের প্রয়াস। ৩. সহিংসতা ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর পক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গীকার। এর একমাত্র ফলাফল হতে পারে একটি স্বাধীন ও মুক্ত রাষ্ট্র। ফানোর বিখ্যাত গবেষণা কর্মগুলোর মধ্যে ‘black skin’, ‘ white mask’, ‘the rest of the earth’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যদিও ফেনো মূলত ফরাসি উপনিবেশগুলোর আদিবাসীদের মানসিক বিপর্যয় ও মনোজাগতিক আঘাত সম্পর্কে তার গবেষণা সীমাবদ্ধ রেখেছেন। কিন্তু সকল সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশের ক্ষেত্রেই ওই গবেষণার ফল সমানভাবে উপযোগ্য। কারণ তিনি দেখিয়েছেন গাত্রবর্ণ কালো থাকলেও ‘colonized’ মানবমন্ডলী সাদাদের মুখোশ পরে তাদের শেখান বলি আওড়ে জীবন ও জগতকে দেখতে গিয়ে কীভাবে ব্যর্থতা ও অর্থহীনতার মধ্যে নিজেকে পুনরাবিষ্কার করে।

ফাঁনো এই প্রথম বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন উপনিবেশী মানুষগোষ্ঠী কিভাবে উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর ওপর বিভিন্নমুখী দৈহিক-মানসিক নির্যাতন চালায়। উপনিবেশিতদের মনোজগতকে বিকৃত করে তারমধ্যে সঞ্চারিত করে দেয় উপনিবেশকের কতিপয় বৈশিষ্ট্য। এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দেয় হীনমন্যতার বোধ। উপনিবেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসকরা ওইসব বৈশিষ্ট্যের প্রভাবে আবির্ভূত হয় উপনিবেশী প্রশাসকদের বিকল্পস্বরূপ। আবার উপনিবেশই সংস্কৃতির

মনোজাগতিক প্রভাবের কারণে স্বাধীনতার পরও জনপর্যায়ে সেই ধারা অনেকটাই অক্ষুণ্ণ থাকে।

২. এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ

এক অর্থে এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদকে উত্তর-ঔপনিবেশবাদের তাত্ত্বিক পীর বলা যেতে পারে। বিশেষকরে তার ‘ওরিয়েন্টালিজম’ গ্রন্থের কারণে।

গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বব্যাপী যে কয়েকটি গ্রন্থ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল, ‘ওরিয়েন্টালিজম’ তাদের মধ্যে অন্যতম। এ গ্রন্থে সাঈদ পশ্চিমের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘেঁটে দেখা কিভাবে উপনিবেশিক জ্ঞান চর্চা উপনিবেশিতের সংস্কৃতি অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবতাকে বিকৃত করে, এমনকি মুছে ফেলে। প্রাচ্য নিকৃষ্ট এবং পশ্চিম উৎকৃষ্ট এই মনোভাবের ওপর ভর করে কিভাবে পশ্চিমে বিশাল একগুচ্ছ রচনা বিকশিত হয় এবং ক্রমে তা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা ও টিকিয়ে রাখার প্ররোচনা যোগায়,পশ্চিমের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মনে তার একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ পাওয়া যায় এই গ্রন্থে। ‘ওরিয়েন্টালিজম’ উপনিবেশবাদ কর্তৃক উপনিবেশিতের অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা কে বিকৃত করার জ্ঞান তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার এক অসামান্য বিশ্লেষণ। প্রাচ্যের প্রতি পশ্চিমের মনোভঙ্গির যে বিকাশ চিহ্নিত করেন তার মূলে আছে — আনেতা ‘ সম্পর্কে পশ্চিমের পণ্ডিতদের ধারণা। সাঈদ বলেন মানুষের আত্মপরিচয় নিবারণের প্রক্রিয়ায় অনেকের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দূর বা অজানা কিছুকে জানার চেষ্টার প্রাথমিক পর্যায়ে সেই অজানা তার কাছে দেখা দেয় এমন কিছু হিসেবে, যা নিজ নয় এবং যা নিজের থেকে অন্যরকম। এই প্রক্রিয়ায় তা হয়ে ওঠে ‘ আন ‘ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হলে সেই ‘ আন ‘ কে করতে হতে হবে নিকৃষ্ট। পশ্চিম তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যকে এভাবেই নির্মাণ করে এবং তাকে নিকৃষ্ট ধরে নিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করে, নিজ মনভঙ্গিতে ক্রমে জ্ঞান চর্চায়, সংস্কৃতিতে। সাহিত্য দেখান এই ‘ আন’ তার নিকৃষ্টতার বোধ পশ্চিমের মানুষদের পরিচিত করেছে আন’কে পরাস্ত করে দখল ও শাসন করতে আমের এলাকায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে বজায় রাখতে।

৩. হোমি কে ভাভা

জন্ম-মৃত্যু: ৩০ অক্টোবর ১৯০৯-২৪ জানুয়ারি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ। তিনি ভারতের একজন প্রসিদ্ধ নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী, প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপক এবং টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান- এর পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তাছাড়া তাঁকে ‘ভারতের নিউক্লীয় প্রোগ্রামের জনক’ বলা হয়। উত্তর ঔপনিবেশিক তাত্বিক ‘ হোমি কে ভাভা ‘ ভারতীয় পারসি। ‘ ভাবা ‘ তাঁর রচনায় পশ্চিমা পণ্ডিত; যেমন- জ্যাক দেরিদা, জ্যাকা লাকা ও মিসেল ফুকোর নানা পর্যবেক্ষণ উদ্ভাবন ও কৌশলের সহায়তা নেন। এজন্য প্রায়ই তার লেখায় এসে পড়ে মিমিক ক্রাই, হায়াব্রিডিটি, আনহোরিমলি প্রভৃতি। ভাবার চিন্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ গতিসম্পর্ক রয়েছে ‘ সাঈদের ‘ ওরিয়েন্টালিজমের। আবার সাইড থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে একটি জটিল প্রশ্ন সমতলে তুলে আনেন ভাবা। ‘ভাবা’ মনে করেন উপনিবেশিক গোষ্ঠীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল না ক্ষমতা ও ডিস্কোর্স। স্থানীয়রাও কথা বলেছে নিজেদের মতো করে পশ্চিমের জ্ঞানের উৎস; অর্থাৎ গ্রন্থ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। উপনিবেশিকরা পুনর্গঠিত শনাক্তযোগ্য প্রায় নিজের মতো করে তৈরি করতে চেয়েছেন। কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষা অবিকৃত থাকেনি। কারণ স্থানীয়রা নির্বাক ও নিষ্ক্রিয় পুতুলমাত্র হয়ে থাকেনি। উপনিবেশিত যখন উপনিবেশকের পুনরায় লেখে তখন তা অনুলিপি হয় না বরং ভিন্ন কিছুতে পরিণত হয়। এভাবে উপনিবেশিতের প্রত্যাখ্যান থাকে না বরং ভিন্ন কিছু বরাবর উচ্চারিত হয়। ভাবার মতে এই ভিন্ন কিছুই হলো বদলে যাওয়া। (সংকর ভাবা 1985)। ভাবার পরবর্তীকালীন চিন্তা ও হাইব্রিটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ দি লোকেশন অফ কালচার’ (১৯৯৪) এবং অন্যান্য লেখায় তিনি যে বক্তব্য উপস্থাপন করেন তার মূলকথা হলো উপনিবেশিক স্থানীয় সংস্কৃতির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মধ্যদিয়ে স্থানীয়দের উপস্থিতি চিহ্নিত করা যায়। এই শংকর অবস্থার মধ্যেই উপনিবেশিক সংস্কৃতি অনেক বেশি শক্তিশালী। বর্তমান পৃথিবীর প্রাক্তন উপনিবেশগুলোর দিকে তাকালে এমন মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, সহজাত প্রবৃত্তি নানারূপ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ এবং পাশাপাশি অবস্থানের কারণে উপনিবেশিক সাংস্কৃতি ও উপনিবেশিত সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন সীমিত মাত্রায় হলেও চলে এসেছে। মানুষের দেশান্তর এবং মিডিয়াটেকনোলজির বিশ্বব্যাপী বিস্তারের ফলেও সংস্কৃতির গ্রহণ বর্জনের মধ্য দিয়ে মিশ্র বা পরিবর্তিত নতুন একটা রূপ গড়ে ওঠে।

৪. আহমেদ সালমান রুশদি

জন্ম: ১৯শে জুন, ১৯৪৭। একজন ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইটস চিলড্রেন ১৯৮১ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিল। তার লেখার অনেকটা অংশ জুড়েই থাকে ভারতীয় উপমহাদেশ। বলা হয়ে থাকে যে তিনি জাদু বাস্তবতার সাথে ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী একত্রিত করে লিখেন। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে অসংখ্য সংযোগ, বিচ্ছিন্নতা ও অভিপ্রয়াণ তার লেখার অন্যতম বিষয়বস্তু।

৫. নাগুগি ওয়া থিয়োঙ্গা

নাগুগি মনে করেন কেবল উপনিবেশিকের সংস্কৃতিকে বর্জন করলেই চলবে না। উপনিবেশিকের সংস্কৃতিকে প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব সংস্কৃতিক ভিত্তিও গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় ভাষা পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তাকে তর্কের ঊর্ধ্বে মনে করেন তিনি। ভাষাকে তিনি চিহ্নিত করেন উপনিবেশিক জ্ঞানভাষ্যের সন্ত্রাসের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে। কেননা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আত্মপরিচয়ের প্রক্রিয়াটিও।

৬. আলবার্ট মেমি

আলবার্ট মামি উপনিবেশিক তিউনেশিয়ার ইহুদি পরিবারের মানুষ। ‘ দি কলোনাইজার ‘ এন্ড ‘ দি কলোনাইজ ‘ (১৯৫৭) গ্রন্থে মেমির বক্তব্যের সারকথা হলো উপনিবেশী শাসনের কারণে উপনিবেশিক ও উপনিবেশিক উভয়ের পারস্পরিক প্রভাবে একরকম অন্যান্য নির্ভর সম্পর্কে উপস্থিত হয়। যে পরিস্থিতির কথা — মেমি’ বলেছেন, সেটি উত্তর-উপনিবেশিক অবস্থার একটি রূপ। তবে ‘ মিমি ‘ পরিষ্কার করে বলেননি যে পারস্পরিক পরিবর্তনে উপনিবেশের পরিবর্তন ঘটে তার স্বার্থ ও সুবিধাজনক অবস্থান অর্জনের অনুকূলে উপনিবেশিতের বেলায় ঠিক উল্টোটা।

৭. আবদুল আর. জানমোহামেদ 

জানমোহামেদও উপনিবেশী জ্ঞানভাষা পুনর্লিখনের ওপর গুরুত্ব দেন। জান মোহাম্মদ মনে করেন স্থানীয়দেরকে ‘ আন ‘রূপে দাঁড় করানোর ও নিয়ন্ত্রণ করার উত্তম জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সাহিত্য। স্থানীয়দের সংস্কৃতি মুছে উপনিবেশকের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এই ক্ষেত্রটি খুবই কার্যকর।

৮. হেলেন টিফিন

উত্তর ঔপনিবেশবাদী তাষিক হেলেন উত্তর-উপনিবেশবাদ – কে কাউন্টার লিস্ট কোর্স হিসেবে বুঝতে আগ্রহী। তাঁর মতে, উত্তর ঔপনিবেশবাদী লেখার লক্ষ্য হচ্ছে, ইউরোপীয় ডিসকোর্স ও ডিসকার্সিভ কৌশলগুলোকে জিজ্ঞাসার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, ইউরোপীয় আধিপত্যের কায়দাগুলো খুঁজে দেখা তিনি আমাদের সতর্ক করে বলেন যে, উত্তর-উপনিবেশবাদী কর্ম-প্রক্রিয়ার যেসব মডেল সংকর- ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর জোর দেওয়া হয় সেগুলোর ধ্বংস করার প্রক্রিয়া পরিচালনার একটা জায়গা পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষ্য যদি কাউন্টার ডিসকার্সিভ না হয়, তাহলে এই মডেল শেষমেশ আরেকটি আধিপত্যশীল ব্যাপার হিসেবে দেখা দেবে। হেলেন অস্ট্রেলিয়ার আদি সাদাদের ব্রিটিশ প্রবণতার আধিপত্য নিষ্ক্রিয় করার সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা করার সময় জোর দিয়ে বলেন যে, এতে প্রাক-ঔপনিবেশিক লেখালেখি এবং মৌখিক রীতিগুলোকে কাউন্টার ডিসকোর্স কৌশল হিসেবে গণ্য করতে হবে।

৯. কওমিয়া অ্যান্তোনি আপিয়া

তিনি আফ্রিকার উত্তর-ঔপনিবেশিকতা নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি উত্তর-ঔপনিবেশিকতার ধারণাতীত ব্যবহারের চোরাগর্ত খুঁজে বের করেন। আপিয়া উত্তর-ঔপনিবেশিকতাকে বোঝেন উত্তর আধুনিকতা, উত্তর তৃতীয় দুনিয়া এবং উত্তর জাতীয়তাবাদ হিসেবে।

সুতরাং সম্ভবনার পরিসর বিস্তৃততর হওয়ার এই সন্ধিলগ্নে পৌঁছে একথা অনায়াসে বলা যায় যে উপনিবেশোত্তর মূল্যবোধ প্রান্তিকায়িত বিপ্রতীপ প্রতাপ উপস্থাপনার সূত্রে ইতিহাসের প্রতিবেদনে সত্যের তাৎপর্য পুননির্মাণ করছে। ‘অপর’ সত্তার প্রতিরোধে সময় ও পরিসরের নন্দন যখন বিনির্মিত হচ্ছে আজ, উপনিবেশোত্তর জগতের নৈঃশব্দি হয়ে উঠেচে দধীচির অস্থি। বজ্রের সম্ভাবনা তাই নতুন মূল্যবোধের প্রেরণা ও আশ্রয়। “We can not exercise power except Through the production of truth.” – একথা বলেছেন ফুকো, তা সমর্থন করে আমরা বলতে পারি, সত্যভ্রম দিয়ে আবৃত সত্যের অবয়বকে অপাবৃত করার দায়িত্ব নিয়েছে উপনিবেশোত্তর মূল্যবোধ। কিন্তু তবু ঐ নৈশব্দের ব্যাপকতা আমাদের কাছে প্রশ্ন হয়ে থাকে। কতটা ধারাবাহিক উদ্যম থাকলে এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক চেতনার কাছে কতখানি নিবেদিত হলে তবে দৃশ্য ও অদৃশ্যঅভ্যাসের দীর্ঘলালিত শেকড়গুলি উপড়ে ফেলা সম্ভব? আপাতত এই প্রশ্নের তাৎপর্য বোঝার চেষ্টায় আমাদের জরুরি কৃত্য।

আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

উত্তর-উপনিবেশিকতা কাকে বলে?

উত্তর-উপনিবেশিকতার উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ

উত্তর-উপনিবেশিকতার প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয়

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.