Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

নারীবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

নারীবাদের বৈশিষ্ট্য : আশির দশকে নারীকেন্দ্রিক তত্ত্বের লড়াইয়ে, একদল নারীর প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যই তাদের স্বতন্ত্র শ্রেণি বা গোষ্ঠী হিসেবে অবস্থানের পক্ষে যথেষ্ট বলে বৈশিষ্ট্যবাদী হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে বৈশিষ্ট্যবাদী বিরোধীরা মনে করেন নারীর পক্ষে তার সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই তার অবস্থান নির্ণয় করে। তবে এই পক্ষে নারীকেন্দ্রিক দলের সংখ্যা বেশি। এরা মনে করেন নারী-পুরুষ প্রকৃতির নির্ধারণকৃত স্বতন্ত্র গোষ্ঠী নয়, তাই তাদের কোনো অপরিবর্তনীয় প্রাকৃতিক চিহ্নে নির্দিষ্ট করা যাবে না। পরিবর্তে যে কোনো সমাজের নারী-পুরুষের অবস্থান সামাজিক নিয়মে নির্ধারিত হয় এবং পরিবর্তনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক নিয়মের অধীন। অন্যদিকে বৈশিষ্ট্যবাদীদের বক্তব্য হলো, মেয়েদের মধ্যে এমন কতকগুলো প্রাকৃতিক মিল আছে। যেগুলোর ভিত্তিতেই রাজনৈতিক কর্মপন্থা ঠিক করা সম্ভব। বৈশিষ্ট্যবাদী ও বৈশিষ্ট বিরোধী এই পারস্পরিক বিতর্কের ফলে নারীবাদী মতবাদের উপযোগিতা নিঃশেষিত। 

প্রথমত, নারীবাদে কোনো বিশেষ একটি রূপ প্রচলিত নয়; বহুস্বরিতা তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

দ্বিতীয়ত, নারী চেতনাবাদের শক্তি তার চলিষ্ণুতায়, স্থিতিস্থাপকতায়।

তৃতীয়ত, ‘নারী রহস্যময়ী ওড়নার আড়ালে রয়ে যায় তার নিভৃত আবেগ, একান্ত গোপন অনুভূতি । চতুর্থত, নারীবাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই কিন্তু নারী। কোনো পুরুষ আত্নপরিচয় দেওয়ার জন্যে কখনো বলবে না ‘আমি পুরুষ’, কিন্তু নারীকে শুরুতেই জানিয়ে দিতে হয় ‘আমি নারী’। তার মানে, লৈঙ্গিক অপরতা দিয়ে তার অভিজ্ঞানের সূত্রপাত। নিজেকে পুরুষের তুলনায় ‘হীনতর অপর ‘ হিসেবে অনুশীলন করতে করতে নারী নিজের গৌণতা, গুরুত্বহীনতা ও স্বাধীনতার অভাবে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

পঞ্চমত, শিক্ষার অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের প্রতি নারীকে সচেতন করতে নারী লেখকদের প্রচেষ্টা চোখে পড়ে। তারা ভারবাহী না হয়ে যে মুক্তি চায়, সেটাই প্রাধান্য লাভ করেছে তাদের লেখায়।

ষষ্ঠত, নারীবাদী সাহিত্য নারী যে ‘মানুষ’ এবং তারও যে রয়েছে ঘরের বাইরে কাজ করার অধিকার, স্বাধীনভাবে বাঁচার তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। নারীকে ভোগ্যপণ্য বা প্রদর্শনের বিষয় রূপে উপস্থিত না করে নারীকে কর্মঠ মানুষ বলে গণ্য করার প্রবণতা এ সব রচনায় বেশি। নারীর স্থান গৃহে এবং পুরুষের দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে রক্ষা করা। -নারী প্রবল বিরোধিতা করেছে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।

সপ্তমত, নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য স্থাপনের প্রক্রিয়া সর্বদা ক্রিয়াশীল। নারীবাদ এই বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ।

অষ্টমত, প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার সম্পদের উপর নারীর অধিকার ছিল। আর সামন্ততান্ত্রিক সমাজে সংগঠিত পুরুষতন্ত্র সেই অধিকার নারীর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নারীকেই পুরুষের সম্পত্তিতে পরিণত করেছে। এক্ষেত্রে নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। সংগঠিত পুরুষতন্ত্র নারীকে সেই অধিকার দিতে কখনোই রাজি হবে না বলেই যেখানেই পীড়ন সেখানে প্রতিবাদ। সমাজের গভীরে নারীর ক্ষোভ যন্ত্রণা প্রতিরোধ ভাষাহীন অন্ধকার ভেদ করে ক্রমশ উচ্চারণের আলোয় জেগে উঠেছে।

নবমত, নারীবাদী তাত্ত্বিকরা লক্ষ্য করেছেন, নারীকে সর্বদা এক ধরণের সামাজিক বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এই বৈষম্য প্রধানত অর্থনৈতিক। নারীবাদে তাই উঠে এসেছে অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি।

দশমত, নিজেকে পুরুষের নর্মসঙ্গিনী হিসেবে সীমাবদ্ধ না করে, এবং বিশেষত যৌন পুত্তলিকা হিসেবে সাধারণ পরিচয়কে মেনে নিতে অস্বীকার করে, নারী পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূল দৃষ্টিকোণকে প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছে। আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার সে নিজেই পেতে চেয়েছে। দেবী বলে কখনও বন্দনা করুক পুরুষ আর কখনও পরিচারিকা মনে করে অবহেলা করুক এই দুইয়ের কোনোটাই চায় নি আর। চেয়েছে ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি।

একাদশত, ফ্রয়েড বলেছেন, লিঙ্গ ঈর্ষা নারীর মধ্যে সার্বজনীন এবং চিরকালীন। তবে লিঙ্গমূলক সমালোচনা কখনোই সর্বজনীনভাবে গৃহীত কোনো তত্ত্বশরীর সৃষ্টি করতে পারে না। একটি সাম্প্রতিক গ্রন্থে টেরী ঈগলটন লিখেছেন, নারীদের আন্দোলন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সৎ এবং প্রতিবাদী বৈশিষ্ট্য নিয়ে সফলজনকভাবে বিকশিত হচ্ছে।

আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

নারীবাদের স্বরূপ ও পরিসর সংক্ষেপে আলোচনা করুন

নারীবাদ কী বা নারীবাদ কাকে বলে? নারীবাদের সংজ্ঞার্থ প্রদান করুন

নারীবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

নারীবাদের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

নারীবাদী লেখকদের পরিচয় দিন

নারীবাদী তত্ত্ব কী? নারীবাদী তত্ত্ব কত প্রকার ও কী কী – আলোচনা করুন

নারীবাদের বিভিন্ন তরঙ্গ বা নারীবাদের ধারাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করুন

সংক্ষেপে নারীবাদের ইতিহাস আলোচনা করুন

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

শওকত আলী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

শওকত আলী (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ – ২৫ জানুয়ারি ২০১৮) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষক। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তাঁর অনন্য সাহিত্যকর্মের জন্য

Read More

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.