Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

প্রকৃতিবাদের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

এই বিশেষ মতবাদটি গড়ে উঠেছিল ডারউইন পরবর্তী জীববিদ্যাকে নির্ভর করে উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে। এঁরা বিশ্বাস করতেন মানুষ প্রকৃতির অংশ। তার কোন আত্মা বা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ভাবনা নেই। অন্যান্য জীবের মত মানুষ দেহ সর্বস্ব। মানুষ উচ্চতর জীব ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের চরিত্রও নির্ধারিত হয় প্রাকৃতিক প্রভাব এবং বংশগত ধারার দ্বারা। তাছাড়া পরিবেশ ও মানুষের চরিত্র গঠনের অন্যতম উপাদান। মানুষের জীবন মূলত ক্ষুদ্রা ও যৌনতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থনৈতিক প্রভাব এবং পারিবারিক প্রভাব তার উপর ক্রিয়াশীল। এই সমস্ত প্রভাবের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে মানব চরিত্র। মানুষের জৈবিক জীবনের পরিচয় তুলে করাই প্রকৃতিবাদের মূল কথা।

সাহিত্য ক্ষেত্রে ফরাসি ঔপন্যাসিক এমিল জোলা (Emil Zola) ১৮৮০ খ্রি: এই বিশেষ মতবাদটি প্রথম প্রথম প্রচার করেন। তখনই প্রকৃতিবাদের প্রথম প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা। কিন্তু জোলার আগেই রশিয়ার কান্টেমির (Cantemir), ক্রাইলাভ (Krylov) ও গল্পকার গোগল এবং নাট্যকার অস্ত্রোভস্কি এই প্রকৃতিবাদের চর্চা করা হয়।

বাস্তববাদী আন্দোলনের চুড়ান্ত পরিণতিতেই এই প্রকৃতিবাদের উদগাতা হিসেব অনেকে ফ্লবেয়ারকে মনে করে। তাঁর রচিত ‘মাদাম বোভারি’ যেমন বিশ্ব সাহিত্য আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়েছে তখন প্রতিবাদী ফসল মাদাম বোভারির মত বাস্তবাদী উপন্যাস। যদিও সেখানে সমাজ ও জীবনের প্রেক্ষাপটে তীব্র আশাবাদের বিচ্‌ছুরণ নয় পাওয়া যায় এক ধরনের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি। ইতিহাসের স্তর বিভাজন সূত্রে ‘শুকরধর্মী’ স্তরে ফ্লোরেয়ার বেশি অগ্রসর হতে পারেননি। তাই, Human life is a sad show, landlubberly ugly, heavy and complex.’ মাদাম বোভারি ফরাসি উপন্যাসের গতিপথে নিঃসন্দেহে দুঃসাহসিক যাত্রাবদল- সে যাত্রা অকুন্ঠ বাস্তবধর্মীতার, যার চুলচেরা বিশ্লেষণে লাভ করা যা আবশ্যই প্রকৃতির স্বাধ।

প্রকৃতিবাদী উপন্যাসিক হিসেবে জোলাকে অথরিটি গণ্য করা হলেও গঁকুর ভ্রাতৃদ্বয়ের সৃষ্টিকর্মে প্রকৃতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত। গোঁকুর ভ্রাতৃদ্বয় তাঁদের জার্নাল-এ ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে বলেছিলন, ইতিহাস যেমন ঘটনার প্রাপ্ত দলিল থেকে লেখা হয়, তেমনি একালের উপন্যাস ও লেখা হয় ঘটমান বস্তু অবলম্বনে অথবা ‘প্রকৃতিকে অনুসরণ করে। জার্নালের ঘোষণা মনে রেখে তাঁর নিজেরাই সেই পদ্ধতিতে উপন্যাস রচনা শুরু করে দিয়েছিল কিন্তু সায়েন্টিফিক প্রকৃতিবাদের প্রথম প্রবক্তা হিসেবে আর্বিভূত হলেন এমিল জোলা। প্রকৃতিবাদী লেখক সাধারণভাবে জনসাধারণের মৌলিক আশা- আকাঙ্ক্ষা দাবি, চাহিদা তুলে ধরেন না, বরং অবক্ষয়িত সমাজের ফটোগ্রাফিতে যেন আশ্বস্ত বোধ করেন। এই ধরনের উপন্যাসিক তাদের সৃষ্টিতে গুরুত্ব দেন।

  1. Sociological enquiry
  2. Extra Phychological Investigation
  3. Method of Scientific workmanship

এই কারণে এডমুন্ডের হাতে জন্ম নেয় woman of paris প্যারিষের গণিকাজীবন, গণিকা পল্লীর অবিকল প্রতিলিপি। এখানে প্রকৃতিবাদীদের প্রত্যাশিত frankness | documentation দুলর্ভ নয়। কিন্তু তদতিরিক্ত কিছু পাওয়া কঠিন। কেননা তাঁর বক্তব্যই ছিল-

“The novel today is made with documents narrated or selected from nature as history is based on written documents”

টেইনের দর্শনচিন্তা বা লুকাসের বংশগতিতত্ত্বই নয়, ডারইনের জীবতত্ত্ব (origin of species) ১৮৫৯ বিষয়ক যুগান্তকারী ব্যাখ্যা ও অগাস্ট কোঁতের ঐহিকতাবাদ (positivism) এর প্রসার ও ফরাসি কথা সাহিত্যে প্রভাব সঞ্চারী হয়েছে। যার ফলশ্রুতি এমিল জোলার সৃষ্টিকর্ম। বিশেষত ২০ খন্ডে সম্পূর্ণ Rongon macquart (১৮৭১ – ১৮৯৩) উপন্যাসমালা মানবিক অধিকারে বিশ্বাসী জোলা আধ্যাত্মিক সত্যকে সত্যকে অস্বীকার করেছেন। অস্বীকার করেননি রক্তমাংশের দেহকে কেন্দ্র করে মানব মনের আশা-আকাক্সক্ষা-আপত্তি, বেশ্যাসক্তি, অন্তলীন পাশবিকতা, কামনা ও যৌন বুভুক্ষা, মদ্যাসক্তি, সর্বোপরি বেদনা ও আর্তনাদ। পজিটিভিস্ট, এভসনিস্ট ও মেটিরিয়ালিস্ট রুপে যেমন জোলার আত্মঘোষণা ছিল, তেমনি আকাঙক্ষা ছিল ‘to be naturalist’ । তাই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ছিল তাঁর অন্বিষ্ট। তথাপি সামগ্রিক অর্থ জর্জ লুকাসের তীক্ষ্ন বিশ্লেষণ ধরা পড়ে, প্রকৃতিবাদী পরীক্ষামূলক উপন্যাসে জোলা Ówriter থেকে mere spectator এ অবনমিত হয়েছেন। মার্কস এঙ্গেলসের চিন্তাধারার উদ্বুদ্ধ লাফাগ ও বালজাকের পতিতুলনায় আক্রমনাত্বক ভঙ্গিতে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, বাস্তবতা সমন্ধে জোলার দৃষ্টিভঙ্গি newspaper reporter সদৃশ্য হয়েছে।

প্রকৃতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু মানব প্রকৃতি, এই আন্দোলনের গল্পগুলি প্লট চালিত না হয়ে চরিত্রগত। যদিও প্রকৃতিবাদ ফরাসি লেখক এমিল জোলার কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কৃতিত্বের শীর্ষে পৌঁছেছিল। ফ্রান্সে, প্রকৃতিবাদ (১৮৭০) এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৮৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে জনপ্রিয় ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর আর্বিভাব ঘটে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। প্রকৃতিবাদী বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং নীতিগুলোকে প্রয়োগ করেন। যেমন প্রবৃত্তি এবং ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব, কল্পকাহিনীতে। এই আন্দোলনের লেখকরা এমন লিখেছেন যেখানে চরিত্রগুলি প্রকৃতিতে প্রাণীদের আবেগ এবং চালনা অনুসারে আচরণ। প্রকৃতিবাদী লেখকরা বিশ্বাস করেন যে সত্য প্রাকৃতিক আইনে পাওয়া যায়, এবং যেহেত্ব প্রকৃতির সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি, নিদর্শন এবং আইন অনুসারে কাজে করে, তাই সত্য সামঞ্জ্যপূর্ণ।

ফ্লরেয়ার, গকুর ভ্রাতৃদ্বয়, জোলা, মোপাসাঁই নয় মার্কিন সাহিত্যে ও প্রকৃতিবাদ বিলম্বে হলে ও বিকাশ ঘটেছে হ্যামলিন গ্যারল্যন্ড, স্টিফেন ক্রেন, ফাঙ্কনরিস এবং জ্যাক লন্ডন এর এবং সাহিত্যকর্মে জার্মান সাহিত্যে ইমার মান, গুস্তাফ ফ্রিন্টাকের উপন্যাসের কিংবা রুপি বুনিনের the vigil শীর্ষক ব্যতিক্রমী উপন্যাসে।

আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

প্রকৃতিবাদ কী বা প্রকৃতিবাদ কাকে বলে?

প্রকৃতিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

প্রকৃতিবাদের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ

প্রকৃতিবাদী লেখকদের পরিচয় দিন

বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতিবাদের প্রভাব

সাহিত্যে প্রকৃতিবাদের প্রভাব সম্পর্কে লিখুন

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.