Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বাংলা সাহিত্যে ন্যাচারালিজমের প্রভাব সম্পর্কে লিখুন

বাংলাসাহিত্যে ন্যাচারালিজমের প্রভাব :

সমাজবিকাশের ধারায় পুরোনো ও নতুন সমাজ ব্যবস্থার দ্বন্দো, ব্যবস্থার অন্তর্গত শ্রেণিদ্বন্দে যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক সংকটে, মূল্যবোধের রুপান্তরে অতীন্দ্রিয়তায় ঋদ্ধ রোমান্টিক রবীন্দ্রসাহিত্যের বিরোধিতায় বাংলা গল্প উপন্যাসে দখল নিল বাস্তবতা, অনিবার্য সূত্রে ন্যাচারালিজম, যান্ত্রিক-ন্যাচারালিজম ও বিষন্ন বাস্তবতা ন্যাচারালিজমের বালজাক, ফ্লাবেয়ার, জোলা, মোপাসাঁ সাদরে গৃহিত হয় বাংলা সাহিত্যে। যুদ্ধোত্তর কালের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সমস্যা, আশাহীনতা, জীবন-সম্পর্কে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বিদ্রোহ দ্রুত গ্রাস করতে থাকে। ন্যাচারালিজমের সাহিত্য রচয়িতাদের সৃষ্টিসমূহ:

১. অচিন্তাকুমার : ‘বেদ’, ‘বিবাহের চেয়ে বড়’, ‘প্রাচীর ও প্রানতর ;

২. জগদীশ গুপ্ত : রতি ও বিরতি অসাধু সিদ্ধার্থ

৩. বুদ্ধদেব বসু : এরা ওরা আরও অনেকে’, ‘রাত ভোরের বৃষ্টি’।

৪. তারাশঙ্কর : ‘হাসুলী বাঁকের উপকথা’ ।

৫. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’।

৬. বিভূতিভূষনের বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘অশনি সংকেত’ ; পঞ্চাশের মন্বন্তবের পটে লেখা দুর্ভিক্ষকাতর জীবনের নিখুঁত চিত্র অঙ্কন করেছেন।

৭. প্রেমেন্দ্রমিত্র : ‘বিকৃত ক্ষুবার ফাঁদে’; অপগত যৌবনা পতিতা জীবনের দুঃসহ এক বাস্তব চিত্র বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া সংসার সীমানতে’ তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য রচনা।

৮. নারায়ন গজ্ঞোপাধ্যায় : ‘টোপ’, ‘হাড়’, পয়সাওয়ালা মানুষের খেয়াল, বিলাস ও কামনাভোগের কাছে বিত্তহীন, ক্ষুৎপীড়িত মানুষের নিরর্থক হাহাকারের নির্মম আলেখ্য।

৯. শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় : তাঁর ‘কয়লাকুঠির’র গুল্পগুলি খনিজ শ্রমিক জীবনের প্রেম, বঞ্চনা, মালিকের ইন্দ্রিয় লালসা ও আত্মিক যন্ত্রনাহীনতার চমৎকার দলিল।

১০. সমরেশ বসু : ‘প্রজাপতি’, ‘বিবর’ উপরোল্লোখিত রচনাগুলি বাংলা সাহিত্যে ন্যাচারালিজমের অন্যতম দৃষ্টান্ত।

সাধারণত একটি রচনায় মধ্যে, উগ্র বস্তুপ্রিয়তা, সরল বর্ণণাপদ্ধতি, নৈরাশ্য, মানুষের মনুষ্যত্বের অন্তরালস্ত জান্তব ধর্মের উন্মেচন খুঁজে পাওয়া যায় না এবং গেলে ও সে রচনার পাঠ্যগুণ থাকে না। তাছাড়া লেখকেরা যদি প্রতিমূহূর্তে পাঠকদের সচেতন করে দেন যে, মানুষের প্রতিটি ভোগ ও কর্ম পূর্বনির্দিষ্ট, ইচ্ছার স্বাধীনতা বলে কিছু নেই, তাইলে ইবসেনের অসওয়ালেডর মতো অসহায় নিরপেক্ষভাবে পূর্বপুরুষের কৃতকার্যের যন্ত্রা ভোগ করতে হয় মাত্র। অসওয়ালেডর পরিণতি অঙ্কনে ইবসেন বংশগতি কে প্রধান্য দিয়েছেন ন্যাচারালিস্ট পদ্ধতিতে। এর ফলে ন্যাচারালিস্ট লেখকেরা বাস্তব জীবন সমস্যার রূপ দিতে গিয়ে পাত্রপাত্রীর নৈরাশ্য ও আত্মিক যন্ত্রণাকেই পাঠকের একমাত্র প্রাপ্তি করে তুলেছেন। ন্যাচারালিস্টরা বিজ্ঞানের নিরপেক্ষতা দাবী করেন। কিন্তু বিজ্ঞানের জগতে গবেষককে নির্ধারিত লক্ষ্যে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব সত্য বলে ধরে নিতে হয়, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বর্জনও করতে হয়। অতএব বিজ্ঞানীকেও নির্বাচন করে নিতে হয় তবে গবেষণায় ও অগ্রসর হতে হয়। অন্যদিকে, একজন শিল্পীকেও প্রথমে ‘নির্বাচন’ অতঃপর ‘রূপায়ণ’ করার মাধ্যমে শিল্পরচনা করতে হয়। সুতরাং নিরপেক্ষ সত্য নিয়ে বিজ্ঞান হয় না সাহিত্য ও হয় না। তাই ন্যাচারালিস্টরা যে নিরপেক্ষতার মহিমা দাবী করেন তা যথাযথ নয়।

ন্যাচারালিস্টদের মধ্যে অনেকেই বিশুদ্ধ ন্যাচারালিস্ট ছিলেন না। তাঁরা ধীরে ধীরে ন্যাচারালিজমের কূল বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে সরে গেছেন। যেমন তেইন ও পল বুরগেট ঝুঁকেছিলেন ধর্মের দিকে, ইবসেন-হাপ্টম্যান প্রতীকতা ও মিষ্টিসিজনের দিকে এবং স্ট্রিন্ডবার্গ নয়ারোমান্টিকতার পোষক হয়ে পড়লেন।

ন্যাচারালিজমে ন্যাচারালিস্টরা যেহেতু কোনো কিছুর হুবহু অনুকরণ করে, তাই অনেকেই একে ‘ফটোগ্রাফি’ বলে সমালোচনা করেছেন।

ন্যাচারালিস্ট শিল্পীরা সারমর্মে বিশ্বাস করে না। তাঁরা শিল্প সাহিত্যের বিষয়বস্তুকে বৃহৎ পরিসরে বর্ণনা করে। ফলে, তাদের বর্ণনায় ‘সরল বর্ণনা পদ্ধতি’ ত্রুটি লক্ষ করা যায়।

ন্যাচারালিস্টরা তাদের সাহিত্যে সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে লুকিয়ে থাকা জটিলতাগুলোর অনুপুঙ্খ রুপায়ন করতে চায়। তাই তাদের সাহিত্যে অধিক পরিমানে বস্তুপ্রিয়তা লক্ষ করা যায়। বস্তুর ভেতর দিয়ে সমাজের ভেতর ও বাহিরকে তুলে ধরতে গিয়ে তাঁরা একধরনের উগ্রতার প্রকাশ ঘটায়। ন্যাচারালিস্টরা সমাজের জটিল সত্যকে উপস্থাপন করতে গিয়ে মানুষের অন্তরাল জগৎকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে তাদের সাহিত্যে পাঠ্যগুনহীনতা লক্ষ করা যায়। এই কারণে রবীন্দ্রনাথ-জগদীশগুপ্তের সাহিত্যকে তেমন পছন্দ করতেন না। তিনি জগদীশ গুপ্তের সাহিত্যের ‘বাস্তববাদ’ কে ‘রিয়ালিটির কারিপাউডার’ বলে উল্লেখ করে।

ন্যাচারালিজম আন্দোলন অন্যান্য আন্দোলনের মতো স্থায়ীপ্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও শ্রমজীবীর জীবন রূপায়নে ছলনাভরা নীতিজ্ঞানের সমালোচনায় জীবন ও শিল্পের মধ্যবর্তী অবকাশ দূরীকরণে যে সাফল্য ন্যাচরালিস্টরা লাভ করেছিলেন, সাহিত্যের জগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সেই কারণেই।

আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

ন্যাচারালিজম কী বা ন্যাচারালিজম কাকে বলে?

ন্যাচারালিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

ন্যাচারালিজমের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ

ন্যাচারালিজমের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয়

বাংলা সাহিত্যে ন্যাচারালিজমের প্রভাব

সাহিত্যে ন্যাচারালিজমের প্রভাব সম্পর্কে লিখুন

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

গল্প আর ছোটগল্প এক নয়। গল্প হল বর্ণিত আখ্যান। কিন্তু ছোটগল্পে আখ্যানকে বিশেষ রীতি, শৈলী ও রূপে প্রকাশ করা হয়। সাহিত্য-শিল্পের মধ্যে ছোটগল্প হল সর্বাধুনিক।

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

অষ্টম সর্গের নাম প্রেতপুরী। লক্ষ্মণের দুর্দশায় শােকে মর্মাহত রামচন্দ্রের করুন অবস্থা দেখে দেবী পার্বতী অত্যন্ত দুঃখ বােধ করলেন। মহাদেব পার্বতীর দুঃখের কারণ জেনে প্রতিকারের উপায়

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

নবম সর্গের মূল ঘটনা মেঘনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে “সংস্ক্রিয়া’ একদিকে রামচন্দ্রের শিবিরে উল্লাস আনন্দের উচ্ছ্বাস এবং অপরদিকে লঙ্কাপুরীতে হতাশা ও শােকের প্রকাশ

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.