বাস্তবাদের বৈশিষ্ট্য: ভাববাদের বিরুদ্ধে অসহিঞ্চুতা ও বিদ্রোহের জন্যই যখন বাস্তবাদের জন্ম তখন সাহিত্য সৃষ্টিতে এই মতবাদের উদ্দেশ্যও অত্যন্ত স্পষ্ট। বাস্তববাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. বাস্তববাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ প্রকৃতিই যা তাকে ঠিক সেইভাবে চিত্রিত করা। অর্থাৎ মানুষ যেমন হলে ভালো হতো, আমাদের মানুষের আচার-আচরণ দেখতে বা পড়তে ভালো লাগে, তা নয়; মানুষের যেমন হওয়া উচিত হলে ন্যায়নীতি সব বজায় থাকে সেরকমও নয়; মানুষ তার সভ্যতা বা কৃত্রিম আচরণের আড়ালে ঠিক সেরকম, তার প্রসাধহীন সেই চেহারাটিই বাস্তববাদী সাহিত্যিকগণ পছন্দ করে থাকেন।
২. বাস্তববাদ তার সৃষ্টিতে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেয় | বাস্তবতাকে কোনো রকম রোমান্টিকতা, আধ্যাত্মিকতা বা আলো আঁধারি করে আড়াল করতে চায় না। বাস্তবতার উন্মোচনই তাঁদের লক্ষ্য, বাস্তবই তাঁদের কাছে সত্য।
৩. এ শ্রেণির লেখার বিষয় ও প্রকাশভঙ্গি সকলস্তরেই থাকে আবেগহীন দৃষ্টিভঙ্গি। কবিতার শব্দ, উপমা ইত্যাদিতে থাকে যেমন তীর্থকথা তেমনি গদ্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে কাহিনি চয়নে। চরিত্র নির্মাণে থাকে নিরেট বাস্তবতা।
৪. বাস্তববাদের ধারার লেখকগণ শিল্পসৃষ্টির খাতিরে অলঙ্কারের অলঙ্কারে রচনাকে ভারি করে তোলেন না তাদের রচনা । এই ধারার লেখকগণ প্রাত্যহিকতার মুখোমুখি হন এবং ‘যা দেখেন’ তাই তারা তুলে ধরেন রচনায়।
৫. বিশ্লেষণ প্রবনতাই এঁদের রচনায় প্রধান বৈশিষ্ট্য। এজন্যে তাদের লেখা মানুষ, প্রকৃতি ও ইতিহাসের আন্তঃসম্পর্কের জটিল ও সামগ্রিক ব্যাখ্যায় সমৃদ্ধ।
৬. উপরতলার মানুষ তথা পুঁজিবাদের ক্রমিক চাপে মানবহৃদয়ের বহুমাত্রিক যন্ত্রণা তাদের লেখায় প্রত্যক্ষ্য হয়ে উঠে।
৭. ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবেশের দ্বন্দ্ব এঁদের সকলেরই রচনার উপজীব্য বিষয়।
প্রেম ও পুঁজির দ্বন্দ্বের নিখুঁত ছবি এঁকেছেন এঁরা।
৯. এ ধারার লেখকদের রচনায় বিশেষভাবে অনুপস্থিত আধ্যাত্মভাবনা, পারলৌকিক জীবন ও অতীন্দ্রিয় চেতনা।
১০. বর্ণনায় যথাযথতা বজায় রাখতে চেয়েছেন সকলে।
আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
বাস্তববাদ কী বা বাস্তববাদ কাকে বলে?
বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন
বাস্তববাদের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ
সাহিত্যে বাস্তববাদের প্রভাব সম্পর্কে লিখুন বা বাস্তববাদী সাহিত্য কর্মের পরিচয় দিন