বাংলা কাব্যোতিহাসের প্রলম্বিত ধারাবাহিকতায় ‘ডাডাবাদ’র কোনো সক্রিয় উপস্থিতি বা প্রভাব ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। সমকালে কল্লোলের একদল মেধাবী তরুণ কবি রবীন্দ্রবলয় থেকে বেরিয়ে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করে রবীন্দ্রাদর্শ বর্জনেরও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছেন। পাশাপাশি দ্যোতিত বিশ শতকের প্রথমদিকে অধুনা কাব্য চর্চার সারস্বত চেতনায় তাঁদেরকে উদ্বেলিত হতেও দেখা যায়।
প্রাচীন বিশ্বাসবোধ ও কাব্য চর্চার প্রচল ঐতিহ্যকে নির্দ্বিধ চিত্তে পরিত্যাগ করে মেধাবী তরুণ কবি গোষ্ঠী আধুনিক কবিতার দীপ্তাঙ্গনে-নিজস্বতায় কবিতার দ্যুতিত অন্তঃপুরে বিচরণের প্রয়াস রাখেন। সাথেসাথে এ লেখকগোষ্ঠী কবিতায় নতুন ধারার উন্মেষ ঘটানোর একটি গ্রহণযোগ্য স্বকীয় এলাকা- পরিব্যাপ্ত অভিজ্ঞানের আওতায় নিয়ে এসে দীক্ষিত ধারায় নীরিক্ষাধর্মী কাব্যরীতির সাধনায় নিজেদের অধিক মাত্রায় অভিনিবিষ্ট করে তুলেন। এ কাব্যরীতির নবীভূত – সংবেদ্য ধারায় যাঁদের নাম পর্যবেক্ষণে উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চারিত হয়েছে তাঁরা হলেন- মোহিতলাল মজুমদার(১৮৮৮-১৯৫২), যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৮৭-১৯৫৪), কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) প্রমুখ এবং তাঁদের পাশাপাশি যাঁদের নাম সমধিক উচ্চারত তাঁরা হলেন ‘তিরিশ’র কল্লোলগোষ্ঠী বা ‘তিরিশ’র প্রধান পাঁচ কবি – জীবনানন্দ দাশ(১৮৯৯-১৯৫৪), প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত(১৯০১-১৯৬০), বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২), বুদ্ধদেব বসু(১৯০৮-১৯৭৪) প্রমুখ।
ডাডাবাদ শিল্পের প্রথাগত ধারণাকে ধাক্কা দিয়ে মুক্তির পথ খুলে দিয়েছিল, ১৯২১ সাল নাগাদ ডাডাবাদের পরিণতি দেখলে মনে হয় ডাডাবাদ তার ঐসিতাহিক ভূমিকা পালন করে ফেলেছে। তারপর তার উত্তোলন ঘটে সুরিয়ালিজম নামক অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপভাবশালী শিল্পতত্ত্বে। কিন্তু দাদা বাদের স্থায়ী ছাপ থেকে গেল ফরাসি কবিতায়। জার্মানিতে ও মার্কিন দেশে অনেক শিল্পীর সহযোগিতায় ডাডাবাদের ধারা অব্যাহত থাকে।অন্যান্য প্রগতিশীল আন্দোলন, পপ শিল্প এবং ফ্লক্সেস প্রভৃতি গোষ্ঠীগুলোও ডাডা আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)
ডাডাবাদের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ