Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বাস্তববাদ কী? সংক্ষেপে বাস্তববাদের পরিচয় দাও

‘বাস্তববাদ’ একটি দার্শনিক পরিভাষা। এ পরিভাষা ও ধারনাটি দর্শন থেকেই পাশ্চাত্য সাহিত্য-সমালোচক ও শিল্পীরা গ্রহণ করেন। পাশ্চাত্য দর্শনে ‘বাস্তববাদ’ শব্দটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধারণা প্রকাশ করে। প্রাচীন ভাববাদী দর্শনে এটি যে- ধারণা প্রকাশ করে, আঠারো শতকে টমাস রীড প্রবর্তিত ‘কাণ্ডজ্ঞান ধারা’য় এসে তার বিপরীত ধারণা প্রকাশ করে। প্রাচীন ভাববাদে ‘সত্য’ বা ‘বাস্তব’ বলে গণ্য হতো এক কল্পিত আদর্শ জগত, আর এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুজগত গণ্য হতো প্রতিভাস রূপে। আঠারো শতকে টমাস রীড এই ধারণাটিকে সম্পূর্ণ উল্টে দেন। তখন থেকে সত্য বা বাস্তব বলে গণ্য হতে থাকে এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুজগত, আর কল্পিত আদর্শ জগত গণ্য হতে থাকে কল্পনা বা অবাস্তব বলে। ‘Realism’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় প্লেটোর ভাববাদে। ‘Real’, ‘Reality’ শব্দগুলোও প্লেটোই প্রথম ব্যবহার করেন। প্লেটো ও তাঁর অনুসারী ভাববাদীরা চরম সত্য বা বাস্তব বলে গণ্য করেন এক কল্পিত আদর্শ জগত ও আদর্শ জগতের ‘ধ্রুবভাব’ রাশিকে বাস্তববাদী দার্শনিকদের মতে, বস্তু কোন কারণেই জানার উপর নির্ভরশীল নয়। কেউ বস্তুকে ‘জানুক’ বা ‘না’ জানুক তাতে বস্তুর কিছু যায় আসে না; বরং এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে।

বাস্তববাদের পরিচয়: দার্শনিক মতবাদ হিসেবে বাস্তববাদ (Realism) আদৌ নতুন নয়; কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ দার্শনিক আন্দোলন হিসেবে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করে বর্তমান শতকের প্রথম দিকে। ‘বাস্তববাদ’ সম্পর্কে ১৮৮৮ এর এপ্রিল মাসে মার্গারেট হার্কনেসকে লেখা এঙ্গেলস- এর একটি চিঠি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়- ‘Realism is to my mind, Besides truth of detail, The truthful reproduction of typical characters under typical circumstances.’

জগত, জীবন ও প্রকৃতিকে বাস্তবনিষ্ঠ ও যথাযথ রূপে চিহ্নিত করাই রিয়ালিজমে বা বাস্তববাদের মূল উদ্দেশ্য। বাস্তববাদ কল্পনাশক্তির প্রাবল্যতার মধ্যেও সীমাবদ্ধতা ঘটিয়েছে। এ জাতীয় কবিতা যত উৎকর্ষই দেখিয়ে থাক না কেন; বাস্তবতার দিকে সে ততটা দৃষ্টিপাত করেনি। ফলে এরও প্রতিক্রিয়া হয়েছে, দেখা দিয়েছে বাস্তববাদে।

ব্র্যাডলি, বোসাঙ্কুয়ে ও ম্যাকটেগার্ট প্রমুখ ভাববাদীদের মতের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডে বাস্তবাদের সমর্থন করেন জি ই মূর (১৮৭৩-১৯৫৮)। ভাববাদের বিরুদ্ধে মূরের প্রধান আপত্তি ছিল এই যে, জ্ঞানের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভাববাদীরা চেতনা ও তার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যকার পার্থক্য নির্দেশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইংল্যান্ডে বাস্তবাদ প্রচারে মূরের এক শক্তিশালী সাথী ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল ( ১৮৭২-১৯৭০)। রাসেলের দীর্ঘ দার্শনিক জীবনে তাঁর জ্ঞানতাত্ত্বিক মতের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে ঠিক, কিন্তু বাস্তবাদী মূলনীতি থেকে তিনি বিচ্যুত হননি কোনো পর্যায়ে। তবে মূর সেখানে মূলত আগ্রহী ছিলেন সহজ বুদ্ধিপ্রসূত ভাষা ও দর্শনে, সেখানে রাসেলের প্রধান আকর্ষণ ছিল লজিক, গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি। বৃটিশ বাস্তববাদী দার্শনিকদের মধ্যে আরও যাঁদের নাম এখানে উল্লেখ্য, তাঁরা হলেন স্যামুয়েল আলেকজান্ডার (১৮৫৯-১৯৩৮) এবং এ. এন হোয়াইটহেড ( ১৮৬১-১৯৪৭ )।

ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় বাস্তবাদের বিকাশ ঘটে প্রায় একই সময়ে। ভাববাদের সমর্থক জমিয়া রয়েস যখন উঠতি বাস্তববাদের বিরোধীতা করেন, তখন বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় এক তীব্র আক্রমণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস্তববাদ যে দুই নতুন নামে পরিচিত হয়ে ওঠে, এরা হলেন নব্য বাস্তববাদ (Neo Realism) ও সবিচার বাস্তববাদ (Critical Realism)।

আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

বাস্তববাদ কী বা বাস্তববাদ কাকে বলে?

বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

বাস্তববাদের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ

বাস্তববাদী লেখকদের পরিচয় দিন

সাহিত্যে বাস্তববাদের প্রভাব সম্পর্কে লিখুন বা বাস্তববাদী সাহিত্য কর্মের পরিচয় দিন

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

গল্প আর ছোটগল্প এক নয়। গল্প হল বর্ণিত আখ্যান। কিন্তু ছোটগল্পে আখ্যানকে বিশেষ রীতি, শৈলী ও রূপে প্রকাশ করা হয়। সাহিত্য-শিল্পের মধ্যে ছোটগল্প হল সর্বাধুনিক।

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

অষ্টম সর্গের নাম প্রেতপুরী। লক্ষ্মণের দুর্দশায় শােকে মর্মাহত রামচন্দ্রের করুন অবস্থা দেখে দেবী পার্বতী অত্যন্ত দুঃখ বােধ করলেন। মহাদেব পার্বতীর দুঃখের কারণ জেনে প্রতিকারের উপায়

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

নবম সর্গের মূল ঘটনা মেঘনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে “সংস্ক্রিয়া’ একদিকে রামচন্দ্রের শিবিরে উল্লাস আনন্দের উচ্ছ্বাস এবং অপরদিকে লঙ্কাপুরীতে হতাশা ও শােকের প্রকাশ

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.