Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

মার্কস এর দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

মার্কস এর দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ : ডারউইন যেমন জীবজগতের বিবর্তন সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক ধারণাটি আবিষ্কার করেছেন, তেমনি মার্কস আবিষ্কার করেছেন মানব ইতিহাসের বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক মূল সূত্রসমূহ। সমাজ পরিবর্তন ও বিকাশের মূলে কোন শক্তি কাজ করেছে তা দার্শনিকদের কাছে একটি অনন্ত জিজ্ঞাসা। সমাজ বিকাশের অন্তর্নিহিত প্রবণতা উদ্ঘাটন করার প্রশ্নে মার্ক তাঁর শিক্ষক হেগেলের দ্বান্দ্বিক সূত্রকে গ্রহণ করেন এবং নিজস্ব ভঙ্গিতে ব্যখ্যা করেছেন। হেগেলের মতে, দ্বন্দ্বই হলো মূল কথা। তাঁর মতে, , বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে (Thesis) মধ্যে স্বভাবজাত একটি বিরোধাত্নক ধারা কাজ করে ( Antithesis)। আর এ দুটি ধারার সংঘাতের ফলে সৃষ্টি হয় সংশ্লেষণ (Synthesis) এভাবে চক্রাকারে সমাজ ও ইতিহাস এগিয়ে যায়। হেগেল বলেন, এসবই ঘটে ভাবের সাথে ভাবের সংঘাতের ফলে। কিন্তু মার্কস হেগেলের দ্বান্দ্বিক সূত্রের জন্য ঋণী থাকলেও দ্বন্দ্বের অভ্যন্তরস্থ শক্তি অর্থাৎ ভাবকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিজ্ঞান সম্মত দৃষ্টিকোণ বিশ্লেষণ করে বলতে চান যে, ভাব নয় বস্তুই হলো মূল শক্তি। বস্তুগত সংঘাতের ফলেই সমাজ ও ইতিহাস এগিয়ে যায়। এটি থেমে থাকেনা বরং অব্যাহত থাকে। এভাবেই নতুন সমাজ ও উৎপাদন ব্যবস্হার সৃষ্টি হয়। মার্কস এর মতে, সমাজ ও ইতিহাসের মূল শক্তি হচ্ছে বস্তু। তাঁরা তাই বস্তুকে মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করেছেন। তাঁদের মতে, অর্থনৈতিক ও উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতেই (Basic structure) মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও ধর্মীয় ইত্যাদি সম্পর্ক (Super structure) নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। সমাজ পরিবর্তন ও শ্রেণি – সম্পর্কের মূল কারণ হলো সমাজের উৎপাদন ব্যবস্হা। হাণ্ট বলেছেনঃ- “The economic system of society… the substructure, always provides the real basis, and the religion,laws and institutions of society are superstructure built upon and determined by it” মার্কস অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে এবং শ্রেণিসংগ্রামের কষ্টিপাথরে ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন যে, সমাজ বিবর্তনের প্রতিটি অধ্যায়ে পরস্পর বিরোধী স্বার্থযুক্ত শ্রেণিসমূহের অস্তিত্ব সমকালীন অর্থনৈতিক বাস্তবতা।

আদি সাম্যবাদ:- আদিম যৌথ সমাজব্যবস্থায় সমগ্র সমাজই ছিল উৎপাদনের উপাদান সমূহের মালিক। তখন কার উৎপাদন শক্তির প্রকৃতির সঙ্গে এই উৎপাদন সম্পর্ক ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই সময় সকলে একত্রে পরিশ্রম করত এবং জীবিকার ব্যবস্থা করত। মামুলি ধরনের উৎপাদন-উপাদান এবং উৎপন্ন সামগ্রীর উপর ছিল সকলের মালিকানা। এই সময় উৎপাদনের উৎপাদনের উপকরণের উপর কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না; ছিল না কোনোরকম শ্রেণিশোষণ।

দাস সমাজ:- দাস-সমাজব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণ এবং উৎপন্ন দ্রব্যের উপর সমগ্র সমাজের মালিকানার পরিবর্তে ব্যাক্তিগত মালিকানা কায়েম হয়। ক্রমশ মানুষ পশুপালন, কৃষিকর্ম ও প্রাথমিক কারিগরি আয়ত্ত করেছে। বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত উৎপাদনে শ্রমবিভাগের সৃষ্টি হয়েছে। এইভাবে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এইসময় শ্রেণিভেদ শ্রেণি শোষণের সূত্রপাত হয়েছে। দাস সমাজে দাস-মালিকরাই ছিলেন উৎপাদনের উপকরণ এবং দাসদের মালিক। উৎপাদন ব্যবস্থার এই সম্পর্ক সেই যুগের অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপুর্ণ ছিল।

সামন্ত সমাজ:- তারপর সামন্ত সমাজ ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণগুলির মালিক হন সামন্ত প্রভুরা, আর উৎপাদনে নিযুক্ত শ্রমিকরা হলেন ভূমি দাস। এই ছিল ঐ সময়কার উৎপাদন সম্পর্ক। তবে সামন্ত শ্রেণির অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন এর উপাদান ও নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্দ্যেগে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপারে কৃষক এবং কারিগরদের অধিকাদ স্বীকৃত ছিল। ঐ সময় কৃষির যথেষ্ঠ উন্নতি হয় । হস্তশিল্পের পাশাপাশি যন্ত্রশিল্পের উদ্ভব হয়। তখন দাসদের পরিবর্তে উৎসাহী শ্রমিকদের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে অপেক্ষাকৃত উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থায় জমিদাসের মধ্যে শ্রেণিভেদ, শ্রেণি শোষণ ও শ্রেণিদ্বন্দ্ব অব্যহত ছিল। সামন্ত সমাজের শোষণমূলক উৎপাদন-সম্পর্ক যন্ত্রশিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধক হিসেবে প্রতিপন্ন হল। তার ফলে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। পুঁজিবাদী সমাজ:- পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় উৎপাদনের যাবতীয় উপকরণের মালিক হল পুঁজিবাদী শ্রেণি। আর শ্রমিকদের জীবন ধারণের জন্য পুঁজিবাদীদের নিকট শ্রমশক্তি বিক্রয় করতে হয়। পুঁজিবাদী উৎপাদন-ব্যবস্থায় উৎপাদন-শক্তির অভাবনীত উন্নতি ও বিকাশ ঘটে। তার ফলে দ্বন্দ্ব ও সংকটের সৃষ্টি হয় এবং তা তীব্রতর হয়। কারণ এই সময় উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কারখানায় নিযুক্ত হয়। তার ফলে উৎপাদনে সামাজিক বৈশিষ্ট্য আসে। তখন সামাজিক উৎপাদনে সঙ্গে ব্যক্তিগত মালিকানার উৎপাদন সম্পর্ক সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়ে। উৎপাদন পদ্ধতির সামাজিক প্রকৃতির কারণে উৎপাদনের উপকরণগুলির উপর সামাজিক মালিকানা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই অবস্থার বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কে অবসান এবং উৎপাদন উপকরণের উপর সামাজিক মালিকানা ও শোষণহীন সম্পর্ক স্থাপন জরুরী হয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ কাকে বলে?

মার্কস ও হোগেলের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের সমালোচনা

মার্কস এর দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করুন

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

গল্প আর ছোটগল্প এক নয়। গল্প হল বর্ণিত আখ্যান। কিন্তু ছোটগল্পে আখ্যানকে বিশেষ রীতি, শৈলী ও রূপে প্রকাশ করা হয়। সাহিত্য-শিল্পের মধ্যে ছোটগল্প হল সর্বাধুনিক।

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

অষ্টম সর্গের নাম প্রেতপুরী। লক্ষ্মণের দুর্দশায় শােকে মর্মাহত রামচন্দ্রের করুন অবস্থা দেখে দেবী পার্বতী অত্যন্ত দুঃখ বােধ করলেন। মহাদেব পার্বতীর দুঃখের কারণ জেনে প্রতিকারের উপায়

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

নবম সর্গের মূল ঘটনা মেঘনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে “সংস্ক্রিয়া’ একদিকে রামচন্দ্রের শিবিরে উল্লাস আনন্দের উচ্ছ্বাস এবং অপরদিকে লঙ্কাপুরীতে হতাশা ও শােকের প্রকাশ

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.