Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিসিজমের প্রভাব সম্পর্কে লিখুন বা রোমান্টিসিজমের সাহিত্য কর্মের পরিচয় দিন

ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসের পাতা উল্টালে বেশিভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, এক যুগের সৃষ্টিশীলতা আঙ্গিকের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে নির্মিত হয়েছে পরের যুগের ভিত্তিপ্রস্তর,আর থিক তাই আমরা দেখি ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক পিরিয়ডে। কাকে বলে রোমান্টিকতা তা নিয়ে মতবাদের সীমা নেই। তাই রোমান্টিসিজমের আটো-সাটো বর্ণনা দেওয়াও অসম্ভব। আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি অবধি ইঊরোপের বিভিন্ন আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে শিল্প সাহিতে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হল রোমান্টিসিজম।

নিওক্ল্যাসিকেল পিরিয়ডের নিয়মে বাঁধা শিল্প-সাইত্য চর্চার বিরোধীতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রোমান্টিক পিরিয়ডের মুক্ত মনের কৃষ্টি চর্চা।অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই দার্শনিক জন লক,রুশোর আবেগ-অনুভূতি অগ্রাধিকারের তত্ত্ব শিল্পী- সাহিত্যিকরা সমাদর করতে থাকেন। ১৭৮৯ সালে সূচিত হওয়া ফরাসি বিপ্লবের প্রভাবে ইংল্যান্ডের আর্থ-সামাজিক অ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা,সাম্য অ সৌভ্রাতৃত্বের আবহ তৈরি হয়।সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৭৮৯ সালে ওয়ার্ড ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজের যৌথ সম্পাদনা “Lyrical Ballard” প্রকাশের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় রোমান্টিক পিরিয়ডের।রোমান্টিসিজম ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ীযুগ হলেও সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যান্য যুগের তুলনায় এই যুগটি বেশ বৈচিত্রময়।প্রাচীনত্বের পরিহার, বাঁধা ধরা নিয়মের উপেক্ষা,কল্পনার আতিশায্য,গতিশিলতা,বিস্ময়সৃষ্টি সব মিলিয়া সমকালীন শিল্প,সাহিত্য অ চিত্রকর্মকে এই যুগটি নতিন রঙে রাঙিয়েছিল।সেজন্য আজো পাঠক সমাজে রোমান্টিক সাহিত্য সর্বসাধারণের মাঝে একইভাবে সমাদৃত। সাহিত্যের ইতিহাসে বৈচিত্রময় এই যুগ বর্তমান সাহিত্যিক ও শিল্প রচয়িতাদের  একইভাবে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে।

বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিসিজমের প্রভাব

বিহারীলাল চক্রবর্তী(১৮৩৫-১৮৯৪):

বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতিকবি বলা হয় তাকে। অতি অল্পসময়ের ভিতর তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন করে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা চালু করেন। তাঁর কাব্যেই প্রথম ‘Romantic Mlankoly’ র প্রকাশ ঘটে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হল: ‘সারদামঙ্গল(১৮৭৯)’, ‘সাধের আসন(১৮৮৯)’, ‘মায়াদেবী(১৮৮২)’, ‘ধূমকেতু(১৮৮২)’, ‘বাউল বিংশতি(১৮৮৭)’, ইত্যাদি। রোমান্টিক বিষণ্ণতার এক করুণ সুর ধ্বনিত হয়েছে তাঁর কাব্যে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১):

বৈষ্ণব পদাবলীর পরে বাঙালি তার রোমান্টিক প্রেমভাবনার বিচিত্র অনুভূতি খুঁজে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের মাঝে। শ্রীচৈতন্যদেবের পৌরহিত্য ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার জনসমাজের মাঝে যে প্রেমের সঞ্চার ঘটেছিল তার উৎস স্বদেশ হলেও রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে বাংলা সাহিয়ে যে রোমান্টিক প্রেমেরসের সমাবেশ ঘটেছিল তার উৎস ইউরোপে। বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথকে “জন্ম-রোমান্টিক কবি” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তীব্র কল্পনাপ্রবনতা, সুদূরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ, সুক্ষ সৌন্দর্যবোধ, প্রকৃতির প্রতি বাঁধভাঙ্গা আকর্ষণ রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক ভাবনার অন্যতম উৎস। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলো হল: ‘ছবি ও গান(১৮৯০)’, ‘সোনারতরী(১৮৯৪)’, ‘চিত্রা(১৮৯৬)’, ‘পুনশ্চ(১৯৩২)’, ‘জন্মদিনে(১৯৪১)’ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক ভাবনার প্রকাশ তাঁর যেসব উপন্যাসে ঘটেছিল সেগুলো হল: ‘চোখের বালি(১৯০৩)’, নৌকাডুবি(১৯০৬)’, ‘শেষের কবিতা(১৯২৯)’ ইত্যাদি। সাহিত্য চর্চার প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ বিহারীলালের অনুসারী ছিলেন।

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬):

বাংলা কাব্য সাহিত্যে নজরুল আবির্ভূত হন রোমান্টিক প্লাবনের যুগে। ফলে তিনিও বিবেক বর্জিত আবেগাপ্লুত হতে বাধ্য হন অনেকটা যুগের প্রভাবে। রোমান্টিক ভাবনায় নজরুল বুদ্ধিনির্ভর নয়, হৃদয়নির্ভর কবি।

কবি হিসেবে নজরুল ছিলেন বিরহকাতর, রোমান্টিক ও সুন্দরের পূজারী প্রেমিক। প্রেমিক নজরুলের মান-অভিমান, অনুরাগ-বিরাগ, দ্বন্দ্ব-সংশয়ের অপূরব প্রকাশ ‘দোলন-চাঁপা(১৯২৩)’। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রোমান্টিক কাব্য: ‘ সিন্ধু হিন্দোল(১৯২৭)’, ‘চক্রবাক(১৯২৯)’ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ও শেলীর মত অতিন্দ্রীয় প্রেমে নজরুল বিশ্বাসী ছিলেন না।

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)

‘রূপসী বাংলার কবি’ বলে খ্যাত এই লেখকের সাহিত্যে রোমান্টিকতা এসেছে অনেকটা প্রকৃতির হাতব ধরেই।বাংলার প্রকৃতি,মাঠ-ঘাট,ধানের শীষ,গোবরে পোকা,সন্ধ্যার আকাশ,বাংলার নদ-নদী,ভোরের শিশির,হেমন্ত ঋতুর রিক্ততা এই সব বিষয়কেই তিনি তাঁর কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন রোমান্টিকতার আদলে। তাঁর রোমান্টিক ভাবনার অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ প্রক্রিতিপ্রেম, নিসঙ্গতা, বেদনা, হাহাকার, রিক্ততা, সৌন্দর্যের প্রতি মোহতা ইত্যাদি।তাঁর রোমান্টিক ভাবনার বহিঃপ্রকাশ হলঃ ঝরা পালক(১৯২৭),রূপসী বাংলা (১৯৫৪), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতাসেন(১৯৩৫) ইত্যাদি।

ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪)

ফররুখ আহমদকে মুসলিম রেনেসাঁর কবি বলা হয়।বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তাঁর কবিতার শব্দচয়ন, বাক্‌প্রতিমা, রোমান্টিকতার বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল ।রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতার ধারাবাহিকথা পরিস্ফুট হয় তাঁর সাত সাগরের মাঝি(১৯৪৪), সিন্দাবাদ (১৯৮৩), দিলরুবা (১৯৪৪) প্রভৃতি কাব্যে।

এছাড়াও বাংলা সাহিত্যে শাহ মুহাম্মদ সগীর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত,বলেন্দ্রনাথ থাকুর,জসীম উদ্‌দীনের লেখায় রোমান্টিকতার ছাপ স্পষ্ট।

আরো পড়ুন: (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

রোমান্টিসিজম কী বা রোমান্টিসিজম কাকে বলে?

রোমান্টিসিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

রোমান্টিকদের রচনার বিষয়বস্তু আলোচনা করুন

রোমান্টিসিজমের উদ্ভবের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ

রোমান্টিসিজমের প্রতিনিধিত্বশীল লেখকদের পরিচয়

বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিসিজমের প্রভাব

সঙ্গীতের উপর রোমান্টিসিজমের প্রভাব

শিল্প ও চিত্রকলায় রোমান্টিকতার প্রভাব

স্থাপত্যশিল্পে রোমান্টিসিজমের প্রভাব

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

গল্প আর ছোটগল্প এক নয়। গল্প হল বর্ণিত আখ্যান। কিন্তু ছোটগল্পে আখ্যানকে বিশেষ রীতি, শৈলী ও রূপে প্রকাশ করা হয়। সাহিত্য-শিল্পের মধ্যে ছোটগল্প হল সর্বাধুনিক।

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য অষ্টম সর্গ ব্যাখ্যা

অষ্টম সর্গের নাম প্রেতপুরী। লক্ষ্মণের দুর্দশায় শােকে মর্মাহত রামচন্দ্রের করুন অবস্থা দেখে দেবী পার্বতী অত্যন্ত দুঃখ বােধ করলেন। মহাদেব পার্বতীর দুঃখের কারণ জেনে প্রতিকারের উপায়

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য নবম সর্গ ব্যাখ্যা

নবম সর্গের মূল ঘটনা মেঘনাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে “সংস্ক্রিয়া’ একদিকে রামচন্দ্রের শিবিরে উল্লাস আনন্দের উচ্ছ্বাস এবং অপরদিকে লঙ্কাপুরীতে হতাশা ও শােকের প্রকাশ

Read More
মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.