Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বাংলা কবিতা রচনায় সুধীন্দ্রনাথ দত্তের অবদান ও সার্থকতা মূল্যায়ন কর

রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কাব্যধারার অন্যতম পথিকৃত সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-১৯৬০) যেন এক নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা। ব্যক্তিগত অনুভূতি তাঁর কবিতায় বিশ্ববেদনায় স্তম্ভিত হয়ে গেছে। যদিও তিনি ‘জনতার জঘন্য মিতালি’তে চিরকাল জুগুপ্সা বোধ করেছেন, তবু তিনি জীবনানন্দের মতো আত্মনিমগ্ন নির্জনতার কবি ছিলেন না, কারণ তিনি জানতেন, সভ্যতার বাইরে ব্যক্তিসত্ত্বার কোনো অস্তিত্ব বা মুক্তি নেই। তাঁর কাব্যসম্ভার যেন এক হতাশ বন্ধ্য নায়কের হাহাকার। সভ্যতার মর্মস্থলেই সেই হাহাকারের উৎস।

গ্যেটের মানবতাবাদ ও মঙ্গলধর্মে বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যেমন বোদলেয়রের নারকীয় আবির্ভাব, তেমনি রবীন্দ্রনাথের নন্দনতত্ত্ব ও শুভবাদের বিরুদ্ধে সুধীন্দ্রনাথের নেতিবাদ ও শূন্যবাদী ঘোষণা জন্মাবধি যুদ্ধে যুদ্ধে, বিপ্লবে বিপ্লবে

বিনষ্টির চক্রবৃদ্ধি দেখে, মনুষ্যধর্মের স্তবে

নিরুত্তর, অভিব্যক্তিবাদে অবিশ্বাসী…

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – এই সময়কালেই সুধীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থগুলি রচিত হয়েছিল: ‘তন্বী’ (১৯৩০), ‘অর্কেস্ট্রা’ (১৯৩৫), ‘ক্রন্দসী’ (১৯৩৯), ‘উত্তর ফাল্গুনী’ (১৯৪০), ‘সংবর্ত’ (১৯৫৩), ‘প্রতিধ্বনি’ (ফরাসি ও জার্মান কবিতার অনুবাদ, ১৯৫৪) ও ‘দশমী’ (১৯৫৬)।

সুধীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্য ‘তন্বী’ উৎসর্গিত হয় রবীন্দ্রনাথের শ্রীচরণে সেখানে কবি বলেছেন, ঋণ শোধের জন্য নয়, ঋণ স্বীকারের জন্য’। এ ঋণ সুধীন্দ্রনাথের কবি চৈতন্যের উৎসারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কাব্যের অধিকাংশ কবিতাই প্রেমের গ্লানি ও বিষণ্নতাক্লিষ্ট। তাঁর দুঃখবাদী, ক্ষণবাদী চেতনা অস্ফুটে স্তিমিত হয়ে আছে ‘বর্ষার দিনে’, ‘পলাতকা’ প্রভৃতি কবিতায়।

‘তন্ত্রী’তে যে ইন্দ্রিয়-ভারাতুর প্রেম চেতনার যে অলক্ষ্য আবেগ আমরা দেখেছি ‘অর্কেস্ট্রা’তে তা অনেক বেশি পরিণত ও অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ – সে অভিজ্ঞতার কেন্দ্রে আছে এক নামহারা বিদেশিনী – যে সঙ্গহীন বিজন প্রবাসে জীবনের এক সংকটকালে দেহ-মনে পর্যুদস্ত কবিকে দিয়েছিল শারীরিক ও মানসিক শুশ্রূষা, আসঙ্গ আশ্রয় ও প্রশ্রয়। কবির কৃতজ্ঞতা প্রসূত উক্তি – ‘সে সেবার নেই প্রতিদান’। ‘অর্কেস্ট্রা’র ভূমিকায় কবি বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত মণীষার জাতীয় মানস ফুটিয়ে তোলাই কবিজীবনের পরম সার্থকতা।’ তাই তাঁর নিঃসঙ্গ নায়কের আর্তনাদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী রৌরবের আর্তনাদ শুনতে পাই। ক্ষণিকের অচরিতার্থ প্রেম স্থায়ী হবে না জেনেও ভালবাসাকেই শরীরী মুদ্রায় ধারণ করার প্রাণপণ প্রয়াস চালিয়েছেন।

‘ক্রন্দসী’ পর্বে এসে কবি ‘বিলাপ বিহ্বলতা’ ও ‘কৃপাজীবী ক্লীবের ক্রন্দন’ পরিহার করেছেন। নিরন্তর আত্মানুসন্ধানের মধ্য দিয়ে নির্দ্বন্ধ কবি বলেছেন-

আমি যারে চাই

তার মাঝে ভেদ নাই, দ্বন্দ্ব নাই,

দেশ কাল নাই…..

কৃষ্ণপরবশ অর্জুনের পরিবর্তে মর্মদর্শী সঞ্জয়ের স্বাবলম্বিতাই তাঁর অভিপ্রেত। কারণ- 

স্থিতধী সঞ্জয়

ডরায় না ব্যাধি, মৃত্যু, জরা।

নচিকেতার প্রেক্ষিতে নিজেকে স্থাপন করে কবি বসুন্ধরার প্রীতি প্রকাশ করেছেন –

দাঁড়ায়ে সে নির্বাণের নির্লিপ্ত কিনারে

নিরুদ্দেশ নচিকেতা দেখেছিল অর্ধমুখে চাহি

সম্ভোগ রাত্রির শেষে ফেনিল সাগরে অবগাহি

শোষিত কাঞ্চনকান্তি নগ্ন বসুন্ধরা।

হতাশা থেকে উৎক্রান্তি অর্জনের অপর নিদর্শন ‘পারাবত’ কবিতায় গ্রিক পুরাণের প্রসঙ্গ।

প্রৌঢ় সভ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে কবির প্রৌঢ় নায়ক যৌবনের সমস্ত জ্বালা বুকে নিয়ে বন্ধ্যা বিষাদে আত্মবীক্ষায় মগ্ন থেকেছেন ‘উত্তর ফাল্গুনী’তে। ক্ষণিকার নির্ভার মৃদু আলাপনের ভঙ্গিতে অচরিতার্থ। প্রেমের নিরুদ্বেগ প্রকাশ –

আমারে তুমি ভালোবাসো না বলে

দুঃখ আমি অবশ্যই পাই;

কিন্তু তাতে বিষাদ শুধু আছেম

তাছাড়া কোনো যাতনা জ্বালা নাই….

বারবার বিশ্বাসের বিনাশ সত্ত্বেও সুধীন্দ্রনাথ আশা করেছিলেন, যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে ভালবাসা ও বিশ্বাসের সেই পুরাণ-কথিত ফিনিক্স আবার জন্ম নেবে। কিন্তু ‘সংবর্ত’-এ এসে কবির সে বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ‘১৯৪৫’ কবিতায় দেখি-

এরই আয়োজন অর্ধ-শতক ধরে

দু-দুটো যুদ্ধ একাধিক বিপ্লবে;

কোটি কোটি শব পচে অগভীর গোরে,

মেদিনী মুখর একনায়কের স্তবে।

সভ্যতা সচেতন মানুষ সভ্যতার বিনষ্টি দেখে নিঃসঙ্গ একাকী বিরূপ বিশ্বে মানুষ নিয়ত একাকী’ – এই একাকিত্ব, এই নিঃসঙ্গতা ইতিহাসের বিস্তীর্ণ প্রেক্ষাপটে প্রতিফলিত হয়েছে। নিয়তিবাদী মানুষ আজ শূন্যতার উত্তরাধিকার নিয়ে ‘এক রুদ্ধশ্বাস দুঃসহ বেদনাবোধে আক্রান্ত। সভ্যতার শিয়রে নির্বাক বিবেকের মতো দাঁড়িয়ে বেদনার্ত যিশুর উদ্দেশ্যে কবি জিজ্ঞাসা করেছেন –

এই পরিণামের লোভে কি

জন্মালে নারীর গর্ভে, আত্মবলি দিলে নরমেধে ….

‘প্রতিধ্বনি’ পঞ্চান্নটি অনুবাদ কবিতার সংকলন। ইংরেজি, ফরাসি ও জার্মান – এই তিন ভাষায় লেখা এগারোজন কবির অনুবাদে সমৃদ্ধ এই কাব্যগ্রন্থ। 

‘দশমী’তে সুধীন্দ্ৰনাথ যতখানি তাত্ত্বিক, ততখানি কবি নন। এখানে তিনি নাস্তিক্য জগতের বাসিন্দা। যে বস্তুনিষ্ঠা থাকলে বিশ্বসংকটকে মূর্ত করে তোলা যায়, কবি যেন তাতে উদাসীন। তাই দেখা যায় ‘বিরূপ বিশ্বে নিয়ত একাকী’ কবি এ কাব্যে শূন্যতা ও নৈরাশ্য থেকে মুক্ত হতে পারেননি।

সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় অনেক ধ্রুপদি লক্ষণ নজরে আসে। ভাষার সঙ্গত শাসনকে তিনি মান্য করে বলেছেন, ‘আমার আনন্দ বাক্যে’; তাঁর কবিতা তৎসম শব্দের বাহুল্যে সংহত নিবিড়। এই ইতিহাস- সচেতন কবি ছন্দে ছাড়া লেখেননি। কিন্তু সময়ের তাড়নাতেই এই নিঃসঙ্গ মানুষের কবিতা আদতে রোম্যান্টিক। ‘বাঁশির বর্বর কান্না, মৃদঙ্গের আদিম উচ্ছ্বাসে’ মুখর। আসলে প্রেমই সুধীন্দ্রনাথের কবিতার প্রধান অবলম্বন – তাঁর বিশ্ববীক্ষাও ব্যক্তিগত প্রেমের কাছে বিধৃত। তাঁর কম-বেশি সব কবিতাই যেন রাইনতীরবাসিনী সেই বিদেশিনীর উদ্দেশ্যে সমর্পিত। শেষ পর্যন্ত তারই কথা – সেই দয়িতার – ‘এখনও বৃষ্টির দিনে মনে পড়ে তাকে’ –

সে এখনও বেচে আছে কিনা

তা সুদ্ধ জানি না।

– এ কাব্যসৌধ যেন শব্দে রচিত এক প্রেমের স্মৃতিসৌধ।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.