Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

বাংলা ছন্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান ও সার্থকতা মূল্যায়ন কর

বাংলা ছন্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ছন্দের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন চির নতুনের কবি, যিনি বারবার নিজেকে ভেঙে নতুন রূপে গড়ে তুলেছেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ছন্দের ক্ষেত্রে, এই সৃষ্টিশীলতা ও নিত্যনতুন ভাবনার প্রয়োগ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ছন্দে যে পরিবর্তন মধুসূদন দত্ত শুরু করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তা আরও বিস্তৃত করে বাংলা কাব্যজগতে এক নতুন উচ্ছ্বাস এনে দেন।

রবীন্দ্রনাথের ছন্দের বৈশিষ্ট্য

রবীন্দ্রনাথের কবিচিত্তের রোমান্টিক ভাবোচ্ছ্বাস তাঁর ছন্দের মধ্যে নতুন এক ধ্বনি ও রূপের সৃষ্টি করেছে। তাঁর কবিতাগুলো শুধুমাত্র গতানুগতিক ছন্দের অনুসরণ করেনি, বরং তা হয়ে উঠেছে প্রকৃত ধ্বনির শিল্প। ছন্দের মাধ্যমে তিনি ভাষার অন্তর্নিহিত ধ্বনি ও স্পন্দনের নতুন ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন, যা তাঁর কবিতাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “মানবের জীর্ণ বাক্যে মোর ছন্দ দিবে নব সুর, অর্থের বন্ধন হ’তে নিয়ে তারে যাবে কিছুদূর, ভাবের স্বাধীন লোকে।” এই ভাবধারাই তাঁর ছন্দকে একটি সম্পূর্ণ নতুন পর্যায়ে নিয়ে যায়।

ছন্দের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য

রবীন্দ্রনাথ ছন্দকে শুধু একটি বাহ্যিক রূপ হিসাবে দেখেননি; বরং তিনি ছন্দকে কাব্যের আত্মার মূর্ত প্রকাশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মতে, ছন্দ হচ্ছে সেই সেতারের বাঁধা তার, যা থেকে সুরের বেগ লাভ করে। ছন্দ কথার অর্থের বাইরে তাকে একটি অনুভূতির স্তরে নিয়ে যায়, যা বেদনায় পূর্ণ এবং রসের গভীরতায় ভরা।

রবীন্দ্রনাথ আধুনিক বাংলা ছন্দের উপর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা প্রথম করেন। তিনি দেখেছিলেন যে বাংলার প্রচলিত ছন্দ নতুন যুগের ভাবের পূর্ণ প্রকাশ ঘটাতে পারছে না। তাই তিনি নতুন ধ্বনিস্পন্দন ও রীতি সৃষ্টির মাধ্যমে ছন্দের পরিসরকে প্রসারিত করেন। তিনি প্রথম বলেন যে, বাংলা ছন্দ একধরনের ধ্বনি শিল্প, যা ভাব ও রূপ, কথা ও ধ্বনি, সুর ও ছন্দের মধ্যে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে।

রবীন্দ্রনাথের ছন্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় ছন্দ নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং নতুন নতুন রীতি সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে:

  1. স্বরবৃত্ত বা দলবৃত্ত: লৌকিক ছড়ার ছন্দ হিসাবে পরিচিত এই ছন্দটিকে তিনি গুরুগম্ভীর কবিতার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’ কবিতায় তিনি স্বরবৃত্তের সার্থক প্রয়োগ দেখিয়েছেন।
  2. অক্ষরবৃত্ত: রবীন্দ্রনাথ অক্ষরবৃত্তের আট-ছয় মাত্রার হেরফের ঘটিয়ে নতুন রীতির কাব্য রচনা করেছেন। পয়ার ছন্দের ভিন্ন রূপ তৈরি করে তিনি ছন্দের মধ্যে নতুন বেগ সঞ্চার করেছেন।
  3. মিত্রাক্ষর ছন্দ: মধুসূদন দত্তের অমিত্রাক্ষর ছন্দকে নতুন রূপ দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, যা বাংলা ছন্দে এক নতুন সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হয়।
  4. সনেট: মধুসূদন দত্তের চতুর্দশপদী কবিতার ভিত্তিতে রবীন্দ্রনাথ ১৬ বা ১৮ মাত্রার সনেট রচনা করেছেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘কড়ি ও কোমল’, ‘মানসী’, ‘নৈবেদ্য’ ইত্যাদিতে এই ছন্দের সার্থক প্রয়োগ দেখা যায়।
  5. মাত্রাবৃত্ত: রবীন্দ্রনাথ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে দীর্ঘস্বরকে একমাত্রা এবং রুদ্ধদলকে দু-মাত্রা ধরে নতুন রূপ দিয়েছেন। এতে করে ধ্বনির স্পন্দনে ছন্দ সুষমিত হয়েছে।
  6. প্রাচীন ছন্দের পুনরাবিষ্কার: চর্যাপদ ও ব্রজবুলির ছন্দের আধারে রচিত পদগুলি রবীন্দ্রনাথ আধুনিক কবিতায় প্রয়োগ করেছেন। তাঁর ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ এবং ‘জনগণমন অধিনায়ক’ এই রীতিতে রচিত।
  7. মুক্তক ও গদ্যছন্দ: রবীন্দ্রনাথ মুক্তক ও গদ্যকবিতার ছন্দে ভাবের মুক্তি ঘটিয়েছেন। ছন্দ নিয়ে তিনি সংস্কারমুক্ত ছিলেন এবং প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে ছন্দের পরিবর্তন ঘটিয়ে বাংলা কাব্যের প্রবাহকে আরও প্রাণবন্ত করেছেন।

রবীন্দ্রনাথের ছন্দের ওপর তাঁর ধারণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ছন্দকে তিনি কেবল কাব্যের বাহন হিসাবে দেখেননি; বরং তিনি ছন্দকে কাব্যের আত্মা হিসেবে গণ্য করেছেন। তাঁর ছন্দের শিল্পকর্ম বাংলা কবিতাকে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং প্রভাবশালী। রবীন্দ্রনাথের এই অবদান বাংলা ছন্দের ক্ষেত্রে তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা ভবিষ্যতের কবিদের জন্য চিরকালীন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.