Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার মাধ্যমেও। সৃষ্টিকর্তার বিধান মানুষ কোনোভাবেই পরিবর্তন করতে পারে না; তা সে যত মহাপরাক্রমশালী ব্যক্তি, বড় রাজা-বাদশাহ, ফকির-দরবেশ, অতুল বিত্তশালী বা নির্ধন যেই হোক না কেন। “সৃষ্টিকর্তার বিধানের বাইরে কারো কিছু করার সাধ্য নেই” একে গ্রিক মাইথলজি (Mythology) তে বলা হয়েছে বিশ্ববিধান। বিশ্ববিধানে মানুষের হাত নেই। এখানে মানুষ নিয়তির হাতের ক্রীড়নক। মানুষ সেভাবেই খেলবে, নিয়তি যেভাবে মানুষকে নিয়ে খেলবেন; মানুষ হলো পুতুল। গ্রিক মাইথলজিতে এই বিশ্ববিধানে মানুষের যেহেতু কোনো হাত নেই, তাই মানুষের জীবন নিয়তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে কর্মের জন্য মানুষ দায়ী নয়। এখানেই মানবজীবনের ট্র্যাজেডি নিহিত। 


শেক্সপিরিয়ান ট্র্যাজেডিতে মানুষের কর্মই তার নিয়তি। মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী। কিন্তু গ্রিক ট্র্যাজেডিতে মানুষ আদৌ তার কৃতকর্মের জন্য দায়ভার বহন করে না। এই পৌরাণিক কাহিনীর বিশ্বাসকে ধারণ করে বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার সোফোক্লিস তার বিশ্ববিশ্রুত নাটক ‘রাজা ইডিপাস’ নির্মাণ করেন।
সোফোক্লিস গ্রিসের এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে। ইডিপাস নাটকের বিষয়বস্তু ইডিপাস নাটকে কোরাসের ভূমিকা ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল ইডিপাস নাটকের চরিত্র সমূহ ইডিপাস নাটকের নিয়তিতখনকার সময়ে এথেন্সে একটি আইন প্রচলিত ছিল যে, সন্তান হত্যা একটি মস্ত বড় অপরাধ ও মহাপাপ। সোফোক্লিস এই অপরাধটির চিত্র নাটকে রূপায়িত করার জন্য প্রচলিত লোকবিশ্বাসকে অবলম্বন করে রচনা করেন ‘রাজা ইডিপাস।’ যদিও তিনি পৌরাণিক কাহিনী বা লোকগাথাকে অবলম্বন করে ‘রাজা ইডিপাস’ রচনা করেছেন, তথাপি তিনি এতে নতুন মূল্যবোধ আরোপ করেছেন এবং জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন এবং এতেই নাট্যকার হিসেবে তার স্বাতন্ত্র্যবোধের পরিচয় বিধৃত হয়েছে।
‘রাজা ইডিপাস’ নাটক একটি ট্র্যাজেডি। গ্রিক দার্শনিক, মহামনীষী ও সাহিত্যবেত্তা  এরিস্টটল ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, রঙ্গমঞ্চে নায়ক বা নায়িকার জীবন-কাহিনীর দৃশ্য পরম্পরা উপস্থাপনের মাধ্যমে যে নাটক দর্শকের হৃদয়ের ভয় ও করুণা প্রশমিত করে তার মনে করুণ রসের আনন্দ সৃষ্টি করে, তাই হলো ট্র্যাজেডি (Tragedy)। মনীষী প্লেটো ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, সার্থক ট্র্যাজেডিতে সকল মানুষ একই সাথে ক্রন্দন করে এবং একই সাথে আনন্দ উপভোগ করে।
আমরা দর্শকরা ইডিপাসের ট্র্যাজেডি দেখতে গিয়ে মানব জীবনের চরম রহস্যের সম্মুখীন এবং এক সার্বজনীন আবেগে বিমোহিত হই। ইডিপাসের যন্ত্রণাজর্জর জীবনের নিঃসীম দুঃখভোগ ও নিদারুণ বেদনা আমাদেরকে দলিত-মথিত করে, তার ট্র্যাজিক জীবনের সকরুণ বেদনা ও সুকঠিন পীড়ন আমাদেরকে পীড়া দেয়, মর্মাহত করে এবং নিয়তির অমোঘ নিয়মকে লংঘন করার প্রয়াস দেখে আনন্দিত হই।
পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত ‘রাজা ইডিপাস’ নাটকের মূল কাহিনী সূত্রটি  থিবিসের রাজা লেয়াস। জোকাস্টা তার স্ত্রী। বহুদিন সন্তান না হওয়ার কারণ জানতে রাজা লেয়াস একাকী ডেলফির মন্দিরে যান। দৈববাণী শোনা গেল যে, তার এই সন্তান না হওয়ার দুর্ভাগ্যকে তার আশীর্বাদ মনে করা উচিত। কেননা জোকাস্টার গর্ভজাত এবং তার ঔরসজাত সন্তান কালে তার হত্যাকারী হবে। সে জোকাস্টাকে কোনো কথা জানাল না, বরং সে জোকাস্টা থেকে দূরে দূরে থাকতে লাগল। জোকাস্টা তাকে কৌশলে প্রলুব্ধ করে সন্তানবতী হলো। নয় মাস পর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ামাত্র লেয়াস ধাত্রীর কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এক মেষপালকের হাতে দিল তাকে মারার জন্য মিথায়েরন পর্বতে। নবজাতকের পা দু’টো লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়া হলো যাতে সে হামাগুড়ি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে না যেতে পারে।
কিন্তু বিধির বিধান অলঙ্ঘনীয়। নিয়তির নির্দেশে নবজাতকের মৃত্যু হলো না। পাশের রাজ্য করিন্থের এক মেষপালক তাকে কুড়িয়ে পেলো এবং তার নাম দিলো ইডিপাস। কেননা তার পা দু’টো পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করার ফলে ফুলে গিয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, ইডিপাস শব্দের অর্থ “পা ফোলা”। মেষপালক তাকে করিনথে নিয়ে এলো। সে সময় রাজা পলিবাস করিনথে শাসন করছিলেন। রাজা পরিবাস ও রাণী মেরোপী নিঃসন্তান। তাই তারা ইডিপাসকে আপন সন্তানের ন্যায় লালন-পালন করতে লাগলো।
একদিন করিনথের এক যুবক ইডিপাসকে এই বলে বিদ্রুপ করলো যে, সে দেখতে তার পিতামাতার মতো নয়। ইডিপাস সন্দিগ্ধ হয়ে ডেলফির মন্দিরে গেল। দৈববাণীতে তার প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া গেল না, বরং বলা হলো যে, সে তার পিতাকে হত্যা করবে এবং মাতাকে বিয়ে করবে। এটা তার নিয়তি। চরম হতাশা ও মর্মের বেদনায় বেদনার্ত ইডিপাস আর করিনথে ফিরে না গিয়ে ফোসিস নামে এক জনপদের কাছাকাছি একটা তে-রাস্তার মোড়ে এলো । সে সময় এক বৃদ্ধ রাজা কয়েকজন অনুচরসহ রথে করে যাচ্ছিলেন। ইডিপাসকে রাস্তা থেকে সরে যাবার হুকুম দেয়া হলো। ইডিপাস সরে না দাঁড়ালে রাজা রথ চালাবার হুকুম দিলেন। রথের একটি চাকা ইডিপাসের পা থেঁতলে দিলো এবং রেগে গিয়ে ইডিপাস রাজা এবং তার অনুচরদের হত্যা করলো। একজন মাত্র অনুচর কোনো মতে প্রাণে বেঁচে গিয়ে থিবিসে জানাল যে, রাজা অনুচরসহ নিহত হয়েছেন দস্যুদের হাতে। ইডিপাস জানতেও পারলো না যে, দৈববাণীর প্রথম অংশ তার জীবনে ঘটে গেল। অর্থাৎ সে তার পিতাকে হত্যা করলো।
রাজা লেয়াস ডেলফির মন্দিরে যাচ্ছিলেন এই জানার জন্যে যে, কী করে স্ফিংসের হাত থেকে থিবিসবাসীকে রক্ষা করা যেতে পারে। সে সময় স্ফিংসের অত্যাচারে থিবিসবাসীর জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছিল। একাকী পথচারীকে পেলে স্ফিংস একটি ধাঁধা জিজ্ঞেস করতো এবং উত্তর দিতে না পারলে তাকে হত্যা করতো ।
লেয়াসকে হত্যার পর ইডিপাস থিবিসের দিকে যাবার পথে নগরপ্রান্তে স্ফিংসের কবলে পড়ে। ধাঁধার উত্তর ইডিপাসের জানা ছিল। ধাঁধার উত্তর শুনে স্ফিংস পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়। কেননা এটা হলো তার নিয়তি।
স্ফিংসের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে থিবিসবাসী ইডিপাসকে রাজারূপে বরণ করে নিল। ইডিপাস রাজা হয়ে দেশাচার অনুযায়ী রাজার বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করলো। কারণ সে তো জানতেই পারলো না লেয়াসের বিধবা স্ত্রী তার গর্ভধারিণী মা।
এরপর সুদীর্ঘ পনেরোটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। থিবিসের প্রজারঞ্জক রাজা হিসেবে ইডিপাস পরম কর্তব্য নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে। তাই সে থিবিসবাসীর প্রিয় রাজা। পারিবারিক জীবনেও সে জোকাস্টাকে নিয়ে সুখী। তার চারটি সন্তান- দু’টি ছেলে, দু’টি মেয়ে। ইডিপাস জানতে পারেনি দৈববাণীর দ্বিতীয় অংশটিও তার জীবনে বহুপূর্বেই সফল হয়েছে। অর্থাৎ তারই গর্ভধারিণী তার শয্যাসঙ্গী হবে তা তার জীবনে নির্মমভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

এটাই হলো ‘রাজা ইডিপাস’ নাটকের পূর্বসূত্র বা কাহিনী। এরপর থিবিস রাজ্যজুড়ে নেমে এলো মহামারী ও দুর্ভিক্ষ। মৃত্যুর অমানিশা। ভীত-সন্ত্রস্ত নগরবাসী এলো ইডিপাসের কাছে মুক্তির আশায়। এরপর আমরা ইডিপাসের যন্ত্রণাজর্জর জীবনের করুণ ট্র্যাজেডির স্বরূপ উদঘাটনে প্রয়াস পাবো।
রাজ্যময় মহামারী আর দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাবার জন্য নগরবাসী ইডিপাসের কাছে এলো। ইডিপাস প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশায় কাতর। সে রাজ্যশ্যালক ক্রিয়নকে এপোলোর মন্দিরে পাঠালো দেবতার নির্দেশ জানার জন্যে। ক্রিয়ন সবার সম্মুখে দৈববাণী জানাতে ইতস্তত করতে লাগলো। কিন্তু সে ইডিপাসের কথায় বললো, রাজ্যের মধ্যে এক মহাপাপকে লালন করা হচ্ছে। এ পাপ মোচন করতে পারলে রাজ্যে শান্তি ফিরে আসবে।
কী সেই পাপ? ভূতপূর্ব রাজা লেয়াসকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ হত্যাকারীর শাস্তিবিধান করা হয়নি। আর হত্যাকারী এ রাজ্যেই আত্মগোপন করে আছে। দেবতার নির্দেশ তাকে নির্বাসনে দিতে হবে। ইডিপাস নগরবৃদ্ধদের ডেকে লেয়াসের হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার জন্য তাদের সহযোগিতা চাইল। তারা জানালো ত্রিকালদর্শী টিরেসিয়াসই এর সমাধান দিতে পারবে। টিরেসিয়াসের কাছে ইডিপাস লেয়াসের আততায়ীর সন্ধান জানতে চাইল। সে ইডিপাসকে সত্য কথা বলতে চাইল না। এতে ইডিপাস উত্তেজিত হয়ে বলল, তুমি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। এই অন্যায় অভিযোগ শুনে টিরেসিয়াস ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং বলে ইডিপাসই রাজা লেয়াসের হত্যাকারী। শুধু তাই নয়, সে তার নিকটতম আত্মীয়ের সাথে পাপের মধ্যে বসবাস করছে। এই অবিশ্বাস্য কথা শুনে ইডিপাসের মনে সন্দেহ হলো, ভাবল হয়তো ক্রিয়ন রাজ্যের লোভে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।
এরপর ক্রিয়নের সঙ্গে ইডিপাসের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। কেউ শান্ত হতে চায় না। এমন সময় রাণী জোকাস্টা এসে সব কথা শুনে বলল, এতে ইডিপাসের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ ভবিষ্যদ্বাণী কখনো সত্য হয় না। যদি তাই হতো তবে আপন সন্তানের হাতে লেয়াসের মৃত্যু হতো। কিন্তু তাতো হয়নি। তিনদিনের শিশুকে নির্জনে ফেলে দেয়া হয়েছিল। আর সকলেই জানে ফোসিস নামে এক জনপদের কাছে তে-রাস্তার মোড়ে দস্যুদলের হাতে লেয়াসের মৃত্যু হয়েছে।
এই কথা শুনে ইডিপাস চমকে উঠলো এবং লেয়াসের মৃত্যুর ঘটনা তার অন্তরে এক অজানা আশঙ্কার সৃষ্টি করলো। লেয়াসের চেহারা কেমন ছিল, কয়জন লোক তার সঙ্গে ছিল
সব কিছু সে জিজ্ঞেস করে যখন মিলে গেল, তখন সে বুঝতে পারল, সে-ই লেয়াসের হত্যাকারী এবং বেঁচে যাওয়া অনুচরকে খুঁজে বের করলো বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্যে।
এমন সময় করিনথে থেকে এক বৃদ্ধ এসে খবর দিল যে, রাজা পলিবাসের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানকার জনগণ ইডিপাসকে রাজা হিসেবে পেতে চায়। ইডিপাস জানে, সে পলিবাসের সন্তান। পলিবাসের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। অতএব দৈববাণী মিথ্যা প্রতিপন্ন হতে দেখে সে এবং জোকাস্টা আনন্দিত হয়। তবু ইডিপাসের আশঙ্কা, তার মা মেরোপী বেঁচে আছে। তাই করিনথে ফিরে যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি সে।
করিনথের রাজদূত ইডিপাসের মনের শংকা দূর করতে চাইলো। সে বলল, ইডিপাস রাজা পলিবাস মেরোপীর আপন সন্তান নয়। এক মেষপালক শিশু ইডিপাসকে কুড়িয়ে পায় এবং সে নিঃসন্তান রাজা-রাণীর হাতে তাকে তুলে দেয়। তারা তাকে আপন সন্তানের ন্যায় লালন-পালন করে। কিন্তু তারা ইডিপাসের আপন পিতামাতা নয়।
ইডিপাস মেষপালকের সন্ধানে লোক পাঠায়। এই মেষপালকের কথা জোকাস্টা ইতঃপূর্বে ইডিপাসকে বলেছে। সব ঘটনা শুনে জোকাস্টা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং ইডিপাসকে ক্ষান্ত হতে অনুরোধ করে। কিন্তু ইডিপাস কিছুতেই নিবৃত্ত হয় না। সে তার জন্ম-রহস্য উদঘাটন করবেই।
কিন্তু জোকাস্টার কাছে সব কিছু দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। সে অস্থির উন্মাদনা নিয়ে চলে যাবার আগে বলে গেল, ‘অন্ধ, তুমি অন্ধ। হায়রে অভাগা। তুমি যেনো কখনো না জানো তুমি কে।’ জোকাস্টা উন্মাদিনীর ন্যায় প্রাসাদ অভ্যন্তরে চলে গেল।

জোকাস্টার এরূপ ব্যবহারে ইডিপাস ভাবল হয়তো কোনো নীচু ঘরের সন্তান সে। তবু সে জন্ম-রহস্য জানার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেল। মেষপালক এলে দেখা গেল এই একই লোক ফোসিস থেকে পালিয়ে এসে লেয়াসের মৃত্যু সংবাদ দিয়েছিল। প্রথমে সে কোনো কথা বলতে চাইল না। কিন্তু ইডিপাসের শাস্তির ভয়ে সে সব কথা খুলে বলল। ইডিপাস তার জন্ম ও জীবনের নিষ্ঠুর সত্যের মুখোমুখি হয়ে এক মর্মভেদী অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগল। রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তর থেকে ভেসে এলো জোকাস্টার হৃদয়ছেদী নিাদরুণ আর্তচিৎকার। কিছুক্ষণ পর এক অনুচর এসে জানালো নিদারুণ লজ্জা, অপমান ও বেদনায় জোকাস্টা আত্মহত্যা করেছে। আর ইডিপাস তারই পোশাক থেকে একটি কাঁটা খুলে নিজের চক্ষু নিজেই উপড়ে ফেলেছে।
পথ হাতড়ে বেরিয়ে এলো অন্ধ ইডিপাস। নিজের শাস্তি নিজেই মাথা পেতে নিল। স্বদেশ থেকে দূরে বহুদূরে নির্বাসনই তার একমাত্র শাস্তি। বালিকা কন্যার হাত ধরে বেরিয়ে যায় হতভাগা ইডিপাস। সকলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় এক মর্মস্পর্শী বাণী অলংঘনীয় নিয়তির নিষ্ঠুর পীড়নে জীবন-যৌবন, ধন-মানের ব্যর্থতার হাহাকারে পিষ্ট ইডিপাসের জীবনকাহিনী।
‘ইডিপাস’ এক আশ্চর্য জীবন্ত চরিত্র এবং এরূপ প্রাণবন্ত ও আবেগময় চরিত্রের তুলনা বিশ্বসাহিত্যে বিরল। গভীর আবেগ আর অনুভূতির তীব্রতায় চরিত্রটি হয়ে উঠেছে সজীব ও প্রাণবন্ত। সম্মান ও সৌভাগ্যে স্ফীত, বিপদে স্থির ও তা প্রতিহত করতে উদ্যত, অন্যায়ের প্রতিবিধান করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা পরিণামে যাই ঘটুক না কেন, কলঙ্কিত অতীত জানতে পেরে আত্মগ্লানি ও অনুশোচনায় মুহ্যমান ইডিপাস। কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানেনি সে। এমন প্রাণবন্ত চরিত্র কেবল গ্রিক নাট্যসাহিত্যে নয়, বিশ্বনাট্য সাহিত্যে বিরল। গ্রিক দার্শনিক ও সাহিত্যবেত্তা এরিস্টটল ‘ইডিপাস’কে অতুলনীয় সার্থক ট্র্যাজেডি হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বিশ্ববিশ্রুত নাট্যকার সোফোক্লিস এ নাটক নির্মাণে সবিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশ্বনাট্য সাহিত্যে তাই তুলনারহিত এক ট্র্যাজেডির নাম ‘ইডিপাস’।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার সঠিক সমাধান ও অনুসন্ধানই হলো গবেষণা। গবেষণার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা এবং মানুষের

Read More
গবেষণা পদ্ধতি কাকে বলে? গবেষণা পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? গবেষণার বৈশিষ্ট্য, গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল, গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি

গবেষণা পদ্ধতি কাকে বলে? গবেষণা পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? গবেষণার বৈশিষ্ট্য, গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল, গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি

গবেষক যখন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি সুশৃঙ্খল কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে, তখন তাকে গবেষণা পদ্ধতি বলে। গবেষণা কোনো বিক্ষিপ্ত ও

Read More
ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

ছোটগল্প কাকে বলে? ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য, ছোটগল্পের উপাদান কয়টি ও কী কী? ছোটগল্পের গঠন কৌশল ও প্রকারভেদ আলোচনা করো

গল্প আর ছোটগল্প এক নয়। গল্প হল বর্ণিত আখ্যান। কিন্তু ছোটগল্পে আখ্যানকে বিশেষ রীতি, শৈলী ও রূপে প্রকাশ করা হয়। সাহিত্য-শিল্পের মধ্যে ছোটগল্প হল সর্বাধুনিক।

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.