Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও মেঘনাদবধ কাব্য : মেঘনাদবধ কাব্যে ব্যবহৃত ভাষা ও ছন্দের পরিচয় তুলে ধরো

বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন মধুসূদনের অসাধারন কীর্তি। বাংলা কবিতায় প্রধান প্রচলিত ছন্দ পয়ার। এই ছন্দকে তানপ্রধান বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দ নামেও অভিহিত করা হয়। এই পয়ার ছন্দই মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দের ভিত্তি। পয়ারের বিচিত্র পরিবর্তন সাধ করে তিনি তাঁর নতুন ছন্দ সৃষ্টি করেছিলে।
পয়ারের প্রতিচরণে চৌদ্দ অক্ষর বা মাত্রা থাকে এবং আটমাত্রা ও চৌদ্দ মাত্রার পরে বিরাম ঘটে। এই ছন্দের প্রতি দুটি চরণে থাকে অন্তমিল। একটি উদাহরন দেওয়া যেতে পারে:
মহাভারতের কথা/ অমৃত সমান। 
কাশীরাম দাসকহে/শুনে পুন্যবান।।
উদ্ধৃত চরণ দুটির মধ্যে রয়েছে অন্তমিল এবং প্রতি চরণের অক্ষর বা মাত্রা সংখ্যা চৌদ্দ। মােট মাত্রা আবার আট মাত্রা ও ছয়মাত্রা-এইদুইপর্বে বিভক্ত। কবিতাপাঠকালে এক নিঃশ্বাসে পাঠ করা যায় না, শ্বাস গ্রহনের জন্য সময়কভাবে থামতে হয়, আবার চরণ দুটিতে আটমাত্রার পরে একবার এবং ছন্নমাত্রার পরে আর একবার যতি পড়েছে।
মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দে চরণের শেষে মিলের অভাবকেই আপাত দৃষ্টিতে প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে মনে হতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ্য রেখেই চরণাস্তিক মিলহীনতার জন মিত্রতার অভাবসূচক ‘অমিত্রাক্ষর’ নামে এই ছন্দটিকে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার অন্ত্যমিলের অভাবই অমিত্রাক্ষর ছন্দের মূল প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য। এ ছন্দের মূল প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য চরনের বিন্যাসে ৮+ ৬ মাত্রা বজায় রেখে ও শ্বাসযুতি ও অর্থতির ঐক্যকে ভেঙ্গে দেওয়া। এর ফলে পয়ারের মত শ্বাসযুতির জন্য যেখানে থামতে হয় সেখানে অর্থ সমাপ্ত করবার কোনও বাধ্যবাধকতা অমিত্রাক্ষর ছন্দে থাকল না এবং ভাবও দুটি চরনের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে প্রবাহিত হওয়ার সুযােগ লাভ করল। এ ছন্দে প্রতিটি চরণকে শ্বাস অনুসারে + ৬ মাত্রার দুটি পর্বে ভাগ করা সম্ভব হলেও অর্থ যতি পড়তে পারে ২, ৩, ৪, ৫, ৬,৭,১০,১১ এমনকি ১২ মাত্রার পরে। যেমন
সম্মুখ সমরে পড়ি,/ বীর-চুড়ামনি 
বীরবাহু, * চলি যবে/ গেলামপুরে 
অকালে, কহ, *হেদেবি/ অমৃতভাতিনি 
কোনবীরবরেবরি/ সেনাপতি-পদে
পাঠাইলা রনে পুনঃ/ রক্ষঃকুলনিধি
রাঘবারি?*
উদ্ধত অংশের প্রতি চরণকেই ৮+ ৬ মাত্রায় দুটি পর্বে ভাগ করা যায়, কিন্তু পয়ারের মতন এখানে দুটি চরনেই অর্থের পরিপূর্নতা না ঘটে পঞ্চম চরণ পার হয়ে ষষ্ঠ চরনের চারটি মাত্রার পরে পরিপূর্ন অর্থ পড়েছে। ভাব যেখানে শেষ হয়েছে যতি পড়েছে যেখানেই। পয়ারের রীতি অনুসারে এই অংশটি পাঠ করা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ এই অংশটির চমৎকার বিশ্লেষন করে অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্বরূপটি সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন।
তিনি লিখেছেন, “এর প্রত্যেক ভাগে কবি ইচ্ছামতাে ছােটো বড়াে নানা ওজনের নানা সুর বাজিয়েছেন কোন জায়গাতেই পয়ারকে তার প্রচলিত আড্ডায় এসে থামতে দেন নি। প্রথা আরম্ভেই বীরবাহুর বীরমর্যাদা সুগভির হয়ে বাজল ‘সম্মুখ সমরে পড়ি’ বীরচূড়ামনি বীরবাহু’ তারপর তার অকালমৃত্যুর সংবাদটি যেন ভাঙা রনপতাকার মতাে ভাঙা ছন্দে ভেঙে পড়ল- “চলি যৰেগেলা যমপুরে অকালে!’ তাঁরপর ছন্দনত হয়ে নমস্কার করলে, – কহু হে জেবি অমৃতভাঘিনী। তারপর আসল কথাটা, যেটা সবচেয়ে বড় কথা, সমস্ত কাব্যের ঘাের পরিনামের যেটা সূচনা, সেটা যেন ঝটিকায় সুদীর্ঘ মেঘগর্জনের মতাে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে উঘােষিত হল – ‘কোন্ বীরবরে বরি সেনাপতি পদে, পাঠাইলা রনেশুনঃ রক্ষঃ কুলনিধি রাঘবারি’?

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

প্রমথ চৌধুরী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

প্রমথ চৌধুরী (৭ আগস্ট ১৮৬৮ — ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬) বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি প্রাবন্ধিক, কবি ও ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান

Read More
সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.