Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

কল্লোল গোষ্ঠীর তিনজন ঔপন্যাসিকের নাম ও তাঁদের একটি করে উপন্যাসের নাম লেখ?

বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেকারত্ব, হতাশা, দারিদ্র্য লক্ষ করে এসময়ের তরুণ সাহিত্যিকরা রবীন্দ্রনাথের সত্য-সুন্দর-কল্যাণের জগতের বিপরীতে অনাহারক্লিষ্ট, কুৎসিত, বিপর্যস্ত পৃথিবীকে সাহিত্যে রূপায়িত করেন। একদিকে ইংরেজদের শাসন-অত্যাচার, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ, রাশিয়ার সাম্যবাদী বিপ্লব, সারাবিশ্বে মার্কসবাদী চিন্তাধারার বিস্তার, অন্যদিকে নিজস্ব শিল্পসাহিত্যে থমকে থাকা ভাব।
এসময় দীনেশরঞ্জন দাস, মানবেন্দ্রনাথ বসু, গোকুলচন্দ্র নাগ ও সুনীতা সেন মিলে ‘ফোর আর্টস ক্লাব’ নামে একটা ঘরোয়া আড্ডার আয়োজন করতেন। এই ক্লাবটিতে সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা ও নাটক নিয়ে নিয়মিত আলোচনা ও চর্চা করা হতো। ১৯২২ সালে তাঁরা ‘ঝড়ের দোলা’ নামে একটি ছোটগল্প সংস্করণ বের করেন। ‘ঝড়ের দোলা’র প্রেরণা নিয়েই ১৯২৩ সালে গোকুলচন্দ্র নাগ ও দীনেশচন্দ্র দাস ‘কল্লোল’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা গড়ে তোলেন। যদিও মাত্র ৭ বছর (১৯২৩-১৯৩০) পর্যন্ত পত্রিকাটি টিকে ছিল, কিন্তু ধারা পরিবর্তনে পত্রিকাটির প্রভাব অনস্বীকার্য। এসময়ের অন্যান্য সাময়িক পত্রিকা যেগুলো ‘কল্লোল’ পত্রিকাকে অনুসরণ করে সেগুলো হলো – ‘উত্তরা’ (১৯২৫), ‘প্রগতি’ (১৯২৬) এবং ‘কালিকলম’ (১৯২৬)। ‘কল্লোল’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এসময়ের সাহিত্যিক গোষ্ঠীই ‘কল্লোলগোষ্ঠী’ নামে পরিচিত। কল্লোল যুগের একটি প্রধান বৈশিষ্ট ছিল রবীন্দ্র বিরোধিতা।

কল্লোল গোষ্ঠীর তিন জন ঔপন্যাসিকের নাম ও তাঁদের উপন্যাসের নাম

১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, চাঁদের পাহাড়,আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন।

২. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় 
উপন্যাস: চৈতালি ঘূর্ণি (১৯৩২), পাষাণপুরী (১৯৩৩), নীলকণ্ঠ (১৯৩৩), রাইকমল (১৯৩৫), প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৩৬), আগুন (১৯৩৮), ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯), কালিন্দী (১৯৪০), গণদেবতা (১৯৪৩), মন্বন্তর (১৯৪৪), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪), কবি (১৯৪৪), সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৬), ঝড় ও ঝরাপাতা (১৯৪৬), অভিযান (১৯৪৬), সন্দীপন পাঠশালা (কিশোরপাঠ্য সংস্করণ, ১৯৪৮), পদচিহ্ন (১৯৫০), উত্তরায়ণ (১৯৫০), হাঁসুলীবাঁকের উপকথা (১৯৫১), তামস তপস্যা (১৯৫২), নাগিনী কন্যার কাহিনী (১৯৫২), আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩), চাঁপাডাঙার বৌ (১৯৫৪), পঞ্চপুত্তলি (১৯৫৬), বিচারক (১৯৫৭), সপ্তপদী (১৯৫৮), বিপাশা (১৯৫৯), রাধা (১৯৫৯), মানুষের মন (১৯৫৯), ডাকহরকরা (১৯৫৯), মহাশ্বেতা (১৯৬১), যোগভ্রষ্ট (১৯৬১), না (১৯৬১), নাগরিক (১৯৬১), নিশিপদ্ম (১৯৬২), যতিভঙ্গ (১৯৬২), কান্না (১৯৬২), কালবৈশাখী (১৯৬৩), একটি চড়–ইপাখি ও কালো মেয়ে (১৯৬৩), জঙ্গলগড় (১৯৬৪), মঞ্জরী অপেরা (১৯৬৪), সংকেত (১৯৬৪), ভুবনপুরের হাট (১৯৬৪), বসন্তরাগ (১৯৬৪), স্বর্গমর্ত্য (১৯৬৫), বিচিত্রা (১৯৬৫), গন্না বেগম (১৯৬৫), অরণ্যবহ্নি (১৯৬৬), হীরাপান্না (১৯৬৬), মহানগরী (১৯৬৬), গুরুদক্ষিণা (১৯৬৬), শুকসারী কথা (১৯৬৭), শক্করবাঈ (১৯৬৭), মণিবৌদি (১৯৬৯), ছায়াপথ (১৯৬৯), কালরাত্রি (১৯৭০), রূপসী বিহঙ্গিনী (১৯৭০), অভিনেত্রী (১৯৭০), ফরিয়াদ (১৯৭১), শতাব্দীর মৃত্যু (১৯৭১), কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড (কিশোর উপন্যাস, ১৯৭২)।
৩. মানিক  বন্দ্যোপাধ্যায়
মানিক রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়।
যে সময়ে কল্লোলের আবির্ভাব, তখন বাংলা সাহিত্যের সর্বকোণ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবে প্রোজ্জ্বল। কল্লোল যুগের লেখকদের মূল লক্ষ্য ছিল রবীন্দ্র বৃত্তের বাইরে এসে সাহিত্যের একটি মৃত্তিকাসংলগ্ন জগৎ সৃষ্টি করা। রোমান্টিক আবেগের বদলে জীবনসংগ্রামের চিত্র, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক দুর্গতির প্রতি সহানুভূতি, নরনারীর সম্পর্ক বিচারে সংস্কারমুক্ত প্রকাশভঙ্গি, শুভ-অশুভ, ভাল-মন্দ মিলিয়ে যে নিরেট মানুষ, তার জীবনযাপনের স্বরূপ উদঘাটনই  কল্লোল যুগের বিশেষ অবদান।
‘তিন বন্দ্যোপাধ্যায়’ খ্যাত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মানিক  বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘কল্লোলগোষ্ঠী’র লেখক ছিলেন। তবে সাহিত্যিক মূল্যায়ন ও জীবন দর্শনের বিচারে তাঁরা ‘কল্লোলগোষ্ঠী’র লেখকদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্য ষষ্ঠ সর্গ ব্যাখ্যা

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদবধ। দৈবাস্ত্র লাভ করবার পর লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কাছে সেটি কীভাবে পেলেন তা বর্ণনা করে। তিনি জানান লঙ্কার অধিষ্ঠাত্রী দেবী

Read More

ইন্দ্রানী সুত কে?

ইন্দ্রাণী শব্দের অর্থ ইন্দ্রের স্ত্রী। সুত অর্থ পুত্র। ইন্দ্রানী সুত হল ইন্দ্রের পুত্র।

Read More
অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের 'ইডিপাস' নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

ট্রাজেডি হিসেবে সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকের সার্থকতা বিচার! ইডিপাস নাটকের শিল্পমূল্য বিচার! ইডিপাস নাটকের গঠন কৌশল

গ্রিক ট্রাজেডি নাটক ‘ইডিপাস’ বাংলায় অনুবাদ করেন সৈয়দ আলী আহসান। গ্রিক ট্রাজেডি যে এতটা নির্মম এবং করুণরসাত্মক হয় তাঁর বাস্তব উদাহরণ ‘ইডিপাস’ নাটকটি। রক্তের সম্পর্কের

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.