সন্ধ্যা ভাষা: হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সন্ধ্যা ভাষা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘আলো আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার; খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না; যাঁহারা সাধন ভজন করেন তাঁহারাই সে কথা বুঝিবেন আমাদের বুঝিয়া কাজ নেই’। ‘আমরা সাহিত্যের কথা কহিতে আসিয়াছি, সাহিত্যের কথাই কহিব।
কারও মতে ‘সন্ধ্যাদেশ’ নামে বিশেষ অঞ্চলের ভাষার সঙ্গে চর্যাপদের ভাষার মিল আছে বলে এ নাম হয়েছে।
বাংলা ভাষার উদ্ভব যুগের এক প্রকার দ্ব্যর্থক শব্দযুক্ত ভাষা ব্যবহৃত হয় চর্যাপদে। এর ভাষা হেঁয়ালিপূৰ্ণ, কিছুটা স্পষ্ট, কিছুটা অস্পষ্ট। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এর ভাষাকে বলেছেন ‘সান্ধ্যা ভাষা’ সুকুমার সেনের মতে ‘সন্ধ্যা’ শব্দটিতে প্রকটভাবে রয়েছে ধ্যৈ বা ‘ধা’ ধাতুর অর্থ। যে ভাষায় অভীষ্ট অর্থ বুঝতে হয় অনুধাবনের মাধ্যমে বা মর্মজ্ঞ হয়ে অথবা যে ভাষায় ভাবার্থ বিশেষভাবে গুপ্ত [সম্+ধা] তা- ই সান্ধ্যা ভাষা। বস্তুত পদগুলোর রচয়িতাগণ ছিলেন বৌদ্ধ সাধক। তাঁরা সাধনা করতেন গোপন তত্ত্বের। আসলে তন্ত্রের সাধনা ছিল অনেকাংশে গূঢ় বা গোপন। এ সাধনা যাতে সাধারণ লোকের হাতে পড়ে বিকৃত না হতে পারে সেজন্য সান্ধ্যভাষার ব্যবহার হতো। চর্যাপদে এ উদ্দেশ্যে পারিভাষিক শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। চর্যার অনেক বর্ণনা আক্ষরিকভাবে এক অর্থ, আবার যোগসাধনার দিক থেকে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।