ধ্বনিবিজ্ঞান: ধ্বনিবিজ্ঞান হচ্ছে বাক্ ধ্বনির বিশ্লেষণ। বাগ্ধ্বনি সম্পর্কে পঠন-পাঠনকে বলা হয় ‘ধ্বনিবিজ্ঞান’।
The science, study, analysis and classification of sounds, including the study of their production, transmission and perception.
পুরনো আমলে ধ্বনিবিজ্ঞানের যে পরিচয় দেয়া হতো তা হলো, ধ্বনিবিজ্ঞান (Phonetics) হচ্ছে ধ্বনির বিজ্ঞান তথা ধ্বনির পঠন-পাঠন, বিশ্লেষণ ও শ্রেণীকরণ — যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে ধ্বনির উৎপাদন, সঞ্চালন এবং অনুধাবন।
ধ্বনিবিজ্ঞানের আধুনিক পরিচয় হলো, “মানুষ যে সকল ধ্বনি উৎপন্ন করে, বিশেষ করে মানববচনে ব্যবহৃত হয় যে- সকল ধ্বনি, সেগুলোর বৈশিষ্ট্যাবলি নিয়ে যে বিজ্ঞানে গবেষণা হয় এবং যে বিজ্ঞান সে সকল ধ্বনি বর্ণনা, শ্রেণীকরণ এবং প্রতিবর্ণীকরণের পদ্ধতি প্রদান করে তা- ই ধ্বনিবিজ্ঞান।”
The science which studies the characteristics of human sound making, specially those sounds used in speech and provides methods for their description, classification and transcription.
এই সব বাগধ্বনি, যা অর্থ ব্যক্ত করার জন্য সকল ভাষাতেই মানুষ ব্যবহার করে, সেই সম্পর্কে পঠন-পাঠনকে বলা হয় ধ্বনিবিজ্ঞান। সংক্ষেপে বলা যায়, ধ্বনিবিজ্ঞান হচ্ছে বাগধ্বনির বিশ্লেষণ। ধ্বনিবিজ্ঞানে বাগধ্বনিকে একাধিক উপায়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়।
ধ্বনিবিজ্ঞানের শাখাসমূহ
আধুনিক ধ্বনিবিজ্ঞানের মুখ্য শাখা চারটি: উচ্চারণমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Articulatory Phonetics), শ্রুতিমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Acoustic Phonetics), শ্রবণমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Auditory phonetics) ও পরীক্ষামূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Experimental phonetics)। নিম্নে ধ্বনিবিজ্ঞানের শাখাসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. উচ্চারণমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Articulatory Phonetics): ধ্বনিবিজ্ঞানে বাগধ্বনিকে একাধিক উপায়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। মানুষের দেহের মধ্যকার যে সকল যন্ত্র (বাগযন্ত্র) ভাষার ধ্বনি উৎপন্ন করে সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে (আকৃতি-প্রকৃতিতে) ধ্বনিকে যে উপায়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হয় তাকে বলে “উচ্চারণমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Articulatory Phonetics)। স্বরযন্ত্র ( larynx ) ও তার উপরের প্রত্যঙ্গগুলির সাহায্যে মানুষ ধ্বনি উচ্চারণ করে। উচ্চারক প্রত্যঙ্গগুলির মধ্যে আবার জিভ ও ঠোঁটের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ । এগুলিই দাঁত ও তালুর সান্নিধ্যে এসে উচ্চারিত ধ্বনির স্বভাব বা গুণ বদলিয়ে দেয়। ধ্বনি – উচ্চারণের এ – সব দিকই উচ্চারণমূলক ধ্বনিবিজ্ঞানের বিবেচ্য বিষয় । একে শারীরবৃত্তীয় ধ্বনিবিজ্ঞান (physiological phonetics) বলে। সংক্ষেপে বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিসমূহের আলোচনাই হচ্ছে উচ্চারণমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান।
২. শ্রুতিমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Acoustic Phonetics): ধ্বনির শ্রুতির বাহ্যিক ভৌত ধর্মকে যে উপায়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হয় তাকে বলা হয়েছে শ্রুতিগত ধ্বনিবিজ্ঞান (Acoustic Phonetics)। ধ্বনিবিজ্ঞানের এ শাখায় বাগধ্বনির ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ (physical properties of sound) আলোচনা করা হয়। ধ্বনির উৎপাদন ও শ্রবণের সঙ্গে সম্পর্কিত বাগধ্বনির নমুনা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে উদ্ধার করে ধ্বনির বাস্তবমুখী বিবরণ প্রস্তুতও এ শাখার অন্তর্গত বিষয় । বস্তুত, ধ্বনি-তরঙ্গ ও ধ্বনি-প্রেরণসম্পর্কিত বিবেচনাই হচ্ছে শ্রুতিমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান।
৩. শ্রবণমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Auditory phonetics): কান, শ্রবণ-ইন্দ্রিয় এবং মস্তিষ্কের দ্বারা যেভাবে বাগধ্বনির অনুধাবন ঘটে তদসংশ্লিষ্ট গবেষণা।ধ্বনিতত্ত্বের এ শাখায় মানুষ কীভাবে ধ্বনি উৎপাদন করে এবং কান, শ্রুতিস্নায়ু (acoustic nerve) ও মস্তিষ্কের সাহায্যে কীভাবে ধ্বনি গ্রহণ করে ইত্যাদি আলোচনা স্থান পায়।
৪. পরীক্ষামূলক ধ্বনিবিজ্ঞান (Experimental phonetics): বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বাগধ্বনির শ্রুতিমূলক, উচ্চারণমূলক ও শ্রবণমূলক বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ ও অধ্যয়নই হচ্ছে পরীক্ষামূলক বা যন্ত্রমূলক ধ্বনিবিজ্ঞান। জ্ঞান বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতি ও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্র উদ্ভাবিত হওয়ার ফলেই ধ্বনিবিজ্ঞানের এ শাখার উদ্ভব ঘটেছে। তুলনামূলকভাবে নবীন হলেও পরীক্ষামূলক ধ্বনিবিজ্ঞান ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে ও নিয়ত সমৃদ্ধি লাভ করে চলেছে।
সহায়ক গ্রন্থ
১. জীনাত ইমতিয়াজ আলী: ‘ধ্বনিবিজ্ঞানের ভূমিকা’
২. মহাম্মদ দানীউল হক: ‘ভাষাবিজ্ঞানের কথা’
৩. মুহম্মদ আবদুল হাই: ‘ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’
৪. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ: ‘আধুনিক ভাষাতত্ত্ব’