বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারবিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন। ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেনের নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলার মুসলমান সমাজের যে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও কুপ্রথা বিরাজমান ছিল, সেসব দূরীকরণই ছিল এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। এই সমাজ তাদের মুখপত্র হিসেবে ‘শিখা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করত, যার প্রতিটি সংখ্যায় লেখা থাকত ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। কলকাতার দি বেঙ্গলি পত্রিকা সাহিত্য সমাজের এই আদর্শকে বুদ্ধির মুক্তি নামে অভিহিত করে। আবদুল ওদুদ তাঁর এক প্রবন্ধে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ শব্দটি উচ্চারণ করেন। এসব থেকেই একসময় মুসলিম সাহিত্য সমাজের আন্দোলনই বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর:
১. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে কোন পত্রিকার মাধ্যমে?
উত্তর: ‘শিখা’ পত্রিকার মাধ্যমে।
২. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রবক্তা কে?
উত্তর: বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের মূল প্রবক্তা আবুল হুসেন।
৩. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের স্লোগান কী ছিল?
উত্তর: ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’।
৪. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন কাকে বলে?
উত্তর: বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন হলো ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারবিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন।
৫. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল?
উত্তর: মুসলমানদের কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তি ও জ্ঞানের রাজ্যে আহ্বান করাই ছিল এই গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য।৬. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সাথে কাঁরা যুক্ত ছিলেন?
উত্তর: বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গঠিত হয় কয়েকজন আলোকিত মানুষের উদ্যোগে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, আবদুল কাদির প্রমুখ।
৭. শিখা পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর: ’শিখা’ ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বছরে একবার প্রকাশিত হত। এর মোট পাঁচটি সংখ্যার সম্পাদকের নাম নিচে দেয় হলো:
আবুল হুসেন, (১ম সংখ্যা)
কাজী মোতাহার হোসেন, (২য় ও ৩য় সংখ্যা)
মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, (৪র্থ সংখ্যা)
আবুল ফজল, (৫ম সংখ্যা)
৮. শিখা পত্রিকা কিভাবে মুসলমান সমাজ গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করছে?
উত্তর: বাংলার মুসলমান সমাজের যে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও কুপ্রথা বিরাজমান ছিল, সেসব দূরীকরণই ছিল এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য
শিখা পত্রিকা ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন
‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই উক্তিটি শিখা পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় লেখা থাকতো ।
শিখা ১৯২৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সাহিত্য সমাজ কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকা। এটি উনিশ শতকের বিশের দশকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হত। এর প্রথম সংখ্যার প্রকাশকাল চৈত্র ১৩৩৩ (৮ এপ্রিল ১৯২৭) এবং এর প্রথম সংখ্যার সম্পাদক ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেন। এটি বাৎসরিক পত্রিকা ছিল ও ১৯৩১ সালে এর পঞ্চম ও শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এর প্রধান কারণ ১৯৩২ সালের মার্চ মাসে আবুল হুসেনের ঢাকা ত্যাগ। তিনিই মূলত প্রকাশনার সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করতেন ও প্রকাশনা – ব্যয়ের একটি বড় অংশও বহন করতেন। এ পত্রিকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মডার্ন লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন আবুল হুসেন। এ পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। একে বলা হয়ে থাকে ঢাকার যুক্তিবাদী আন্দোলন।
সমকালের অন্যান্য সাময়িকপত্র থেকে শিখা ভিন্ন ধরনের ছিল। মুসলিম সাহিত্য – সমাজের সারা বছরের কর্মকাণ্ডের পরিচয় বহন করত এটি। শিখার প্রতিটি সংখ্যার উপরে “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব” কথাটি লেখা থাকত। এটি বাঙালি মুসলিম সমাজে নতুন যুগের হাওয়া বইয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের আদর্শ ছিল উনিশ শতকের নবজাগরণ, ইউরোপের নবজাগরণ, কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্কের বুকে জন্ম নেওয়া নবজাগরণ।
প্রমথ চৌধুরী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম
প্রমথ চৌধুরী (৭ আগস্ট ১৮৬৮ — ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬) বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি প্রাবন্ধিক, কবি ও ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান