ন্যায়দর্শন হচ্ছে ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন। ন্যায়দর্শন হল সেই ভিত্তি যার উপর ভারতের উচ্চতর দর্শনগুলি নির্মিত হয়েছে। ন্যায় দর্শনের প্রবক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম, তার অপর নাম- অক্ষপাদ (মহর্ষি গৌতম অক্ষপাদ)। তিনি ন্যায় সূত্র রচনা করেছিলেন।
আমাদের জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট আমাদের অজ্ঞতার কারণে, তাই সঠিক জ্ঞান অর্জন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায় দর্শন ষােলটি বিভাগকে স্বীকৃতি দেয় অর্থাৎ ন্যায় দর্শনের শাখা ষােলটি। প্রথম বিভাগটি ‘প্রমান’ নামে পরিচিত যা ন্যায় ব্যবস্থার যৌক্তিক এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
এটি দাবি করে যে চারটি স্বাধীন প্রমান (বৈধ জ্ঞানের উৎস) আছে। এগুলাে হলাে উপলব্ধি, অনুমান, তুলনা, এবং মৌখিক সাক্ষ্য বা শব্দ ন্যায়িকদের মতে, উপলব্ধি হল বস্তু এবং ইন্দ্রিয়-অঙ্গের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত প্রত্যক্ষ এবং তাৎক্ষণিক জ্ঞান। উপলব্ধিগত জ্ঞানের জন্য, চারটি উপাদান প্রয়ােজন। এগুলাে হলাে- আত্ম, মন, ইন্দ্রিয় এবং বস্তু।
বাৎস্যায়নের মতে বিভিন্ন প্রমাণের সাহায্যে কোন বিষয়ের স্বরূপ বিবেচনা করাই হলো ন্যায়। প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় ও নিগমন এই পাঁচটির সমন্বয়ে গঠিত অনুমান হচ্ছে ন্যায়দর্শনের মূল সূত্র।
ন্যায়দর্শনের প্রাচীনতম গ্রন্থ ন্যায়সূত্র (খ্রি ২০০-৪৫০)। এতে ৫২৮টি সূত্রে অতি সংক্ষেপে আত্মতত্ত্ব ব্যাখ্যাত হয়েছে; ফলে অনেক সময় তার প্রকৃত তাৎপর্য নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করার জন্য এই সূত্রগ্রন্থের অনেক টীকা-টিপ্পনী রচিত হয় এবং সেসবের মাধ্যমে ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি ঘটে। এর প্রথম ব্যাখ্যা হলো বাৎস্যায়নের ভাষ্য। এরপর উদ্দ্যোতকর (ন্যায়বার্তিক, ৬ষ্ঠ-৭ম খ্রি), বাচস্পতি মিশ্র (তাৎপর্যটীকা, ৯ম খ্রি), উদয়নাচার্য (তাৎপর্যপরিশুদ্ধি, ১০ম খ্রি), জয়ন্ত ভট্ট (ন্যায়মঞ্জরী), বিশ্বনাথ (ন্যায়সূত্রবৃত্তি, ১৭শ খ্রি), রাধামোহন গোস্বামী (ন্যায়সূত্রবিবরণ, ১৮শ খ্রি) প্রমুখ এর টীকা রচনা করে আলোচ্য বিষয়কে আরও সহজবোধ্য করে তোলেন।