অর্ধ-স্বরধ্বনির সংজ্ঞার্থ নিরূপণ করে ব্রিটিশ ধ্বনিবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জোনস বলেছেন, “Semi – vowel : a voiced gliding sound in which the speech organs start by producing a vowel of comparatively small prominence and immediately change to a more prominent vowel.
(Jones; 1997: 04)
অর্ধ-স্বরধ্বনি অক্ষর তৈরি করতে পারে না। অক্ষর তৈরি হয় স্বরধ্বনির দ্বারা। অক্ষর আদি মূল কেন্দ্র অন্ত
মুহম্মদ আবদুল হাই বলেছেন, “দুই স্বরধ্বনির মাঝখানে কিংবা এক শব্দের শেষে এবং পরবর্তী শব্দের আদিতে পাশাপাশি একই স্বরধ্বনি থাকলে এক সঙ্গে উচ্চারণ করতে গিয়ে বাগযন্ত্রগুলোর অসুবিধা হয়। সেই অসুবিধা দূর করবার জন্যে যে সব অস্পষ্ট ধ্বনি উত্থিত হয় সেই gliding ধ্বনিগুলোই তার পরবর্তী স্বরধ্বনি সহযোগে জাত যথার্থ অর্ধস্বরধ্বনি।”
তিনি অর্ধ-স্বরধ্বনির তিনটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যেরও উল্লেখ করেছেন:
- জিহ্বার অবস্থানের দিক থেকে অর্ধ-স্বরধ্বনির নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই।
- উচ্চারণের সময়ের দিক থেকে তার স্থিতিকাল অত্যন্ত স্বল্প অর্থাৎ মুখের মধ্যে ধ্বনিটি তৈরী হতে না হতেই উচ্চারিত হয়ে যায়।
- স্বরধ্বনির তুলনায় উচ্চারণে জিভ উচ্চতর ও বায়ুপথ সংকীর্ণতর হয় বলে অর্ধ-স্বরধ্বনি সবচেয়ে কম অনুরণিত হয়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: অর্ধ-স্বরধ্বনির সিলেবল গঠনের ক্ষমতা নেই, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিলেবলের প্রান্তে বসে।
বাংলা অর্ধ-স্বরধ্বনি
বাংলা অর্ধ-স্বরধ্বনির সংখ্যা নিরূপণে ধ্বনিবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৯৮৯: ৯১) ও সুকুমার সেনের (১৯৯৮: ৪০) মতে, বাংলা অর্ধ-স্বরধ্বনি ২ টি। যথা:
অন্তস্থ ‘ব্’ (w) এবং অন্তস্থ ‘য়্’ (y)।
কিন্তু মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯৯৪: ৩৪) ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি বাংলায় ৩ টি অর্ধ-স্বরধ্বনি দেখিয়েছেন।
অন্তস্থ /য়/ /y/ পায়া (paya), মায়া (maya)
অন্তস্থ /ব/ /w/ নোয়া (nowa) খাওয়া (khawa)
/ই/ /i/ পিউ (piu), দিয়া (diya)
আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ বলেছেন, “অন্তস্থ [ব্] , অন্তস্থ [য়্] ইংরেজিতে অর্ধ-স্বরধ্বনির মর্যাদা পেলেও এগুলি বাংলা অর্ধ-স্বরধ্বনি নয়
(মনজুর মোরশেদ; ১৯৯৭: ২১২)।
ফার্গুসন ও মুনীর চৌধুরী (Furguson, et al; 1960: 29): বাংলা ৪ টি অর্ধ-স্বরধ্বনি নির্দেশ করেছেন। যথা:
/ই/ /i/
/এ/ /e/
/ও/ /o/
/উ/ /u/
অর্ধ-স্বরধ্বনি নির্ণয়ের পদ্ধতি: ধ্বনির পাঠ প্রতিকল্পন
/ই/ /i/ জা-ই [ja-i] -যাই [jai] (আমার জা-ই এ কাজ করেছে )
/এ/ /e/ জা-এ [ja-e] – যায় [jae] (আমার জা-এ করেছে )
/ও/ /o/ জা-ও [ja-o] -যাও [jao] (আমার জা-ও যাবে )
উ এর সংখ্যাজোড় নেই। এটা একটা সীমাবদ্ধতা। তবে আঞ্চলিক বাংলা ভাষায় আছে। উদাহরণ: (যা-উ /জাউ/)
সহায়ক গ্রন্থ
১. জীনাত ইমতিয়াজ আলী: ‘ধ্বনিবিজ্ঞানের ভূমিকা’
২. মহাম্মদ দানীউল হক: ‘ভাষাবিজ্ঞানের কথা’
৩. মুহম্মদ আবদুল হাই: ‘ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’
৪. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ: ‘আধুনিক ভাষাতত্ত্ব’