বনফুলের সমাজ মনস্কতার আর এক বাস্তবসম্মত রূপ ‘উৎসবের ইতিহাস” গল্পে বিধৃত। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত চাকুরী প্রার্থী যুবকের এক বিপর্যস্ত মানসিকতার গল্প এটি। প্রথম শ্রেণীর এম.এ, নরেন মল্লিকের তিরিশ টাকা মাইনের কেরানির চাকরি পাওয়ার জন্য কিভাবে সমাজের খােসামােদ, অনুরােধ করতে হয়েছিল, অর্থাৎ ‘তেল মারতে হয়েছিল, তার জীবনের সেই অনপনেয় জটিলতার ইতিহাস ‘উৎসবের ইতিহাস’’। এই রুগ্ন চিত্র আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তৎকালীন সমাজে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের জীবন সংগ্রামের রুগ্ন রূপটি।
গল্পটি এরকম অনন্যোপায় নরেন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সাগ্রহে বিশু সান্যালকে তৈলাক্ত করিতেছে। বিশু সান্যালকে সুচারু রূপে তৈলাক্ত করার পর নরেন মল্লিক বুঝলেন যে, তার তৈলনিষেক শক্তি নিঃশেষিত হয়নি। এখনও বহু লােককে সে তৈলসুখ দিতে পারে। সুতরাং কালক্ষেপ না করে নরেন মল্লিক পরাণ সিংহের দ্বারস্থ হলেন এবং তাকে যারপরনেই তৈলাক্ত করলেন। ঘুঘু পানু মিত্তিরকেও তৈলাক্ত করলেন। কিন্তু একের পর এক ব্যক্তিকে যথাসাধ্য তৈলাক্ত করার পরও নরেন মল্লিকের সেই কেরানি চাকরি জোটেনি। এর জন্য নরেন মল্লিককে আরাে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়। তা হল –’নরেন মল্লিককে ঘুঘু মিত্তিরের বয়স্থ কুৎসিত কন্যাটির পানি পীড়ন করিতে হইবে। প্রতিশ্রুতি মত – “সেই চাকুরী পাইয়াছে। হউক কেরানিগিরি, হউক বেতন তিরিশটাকা – চাকুরী তাে!” এই তিরিশ টাকার মাইনের শর্তসাপেক্ষ। চাকরি পেয়েছে, তাই নরেন মল্লিকের পিতা প্রবীণ মল্লিকের বাড়িতে এই উৎসবের আয়ােজন।
এ উৎসবের ইতিহাসের পেছনে যে ইতিহাস নিহিত তা সেকালে যেমন বনফুলকে। ভাবিয়েছিল একালেও আমাদের ভাবায়। শিক্ষিত এম.এ. পাশ ছেলের জীবনে এর চেয়ে করুণতম পরিণাম আর কি হতে পারে! এ থেকে যেন পরিত্রাণ নেই বেকার শিক্ষিত মধ্যবিত্তের। জীবনের এমন শাশ্বত রূপ নির্মাণেই বনফুলের শিল্পী মানসের অভিজ্ঞান।
বনফুলের ছােটগল্প উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ.ডি. (বাংলা) উপাধির জন্য প্রদত্ত গবেষণা অভিসন্দর্ভ
গবেষক: সুবল কান্তি চৌধুরী
তত্ত্বাবধায়ক: ড. নিখিল চন্দ্র রায় বাংলা বিভাগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
১. বাংলা ছােটগল্প’ – শিশির কুমার দাস।
২. ‘বনফুলের ছােটগল্প সমগ্র’ – চিরন্তন মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত।
৩. ‘বনফুলের ফুলবন’ – ড. সুকুমার সেন।সাহিত্যলােক।
৪. ‘বনফুলের উপন্যাসে পাখসাট শােনা যায় প্রবন্ধ—মনােজ চাকলাদার।
৫. ‘পশ্চাৎপট – বনফুল (১৬ – তম খণ্ড)।