Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

বনফুলের ‘অধরা’ ছোটগল্পের মূলভাব বা মূলকাহিনি, চরিত্রসমূহ, পটভূমি ও প্রেক্ষাপট, শিল্পমূল্য ও সাহিত্যমূল্য বিচার এবং নামকরণের সার্থকতা বিচার!

বনফুল শুধু ইহ জগতের রূপচিত্রণই করেননি, পারলৌকিক বা অলৌকিক জগতেরও স্বরূপ তুলে ধরেছেন। এই অলৌকিক রসের গল্পের মধ্যে “অধরা” গল্পটিতে এক নিন রাত্রির পটভুমিকায় প্রিয়ার সান্নিধ্য অনুভবের কথা থাকলেও শেষে তা ভ্রান্তি বলে মনে হয় গল্প কথকের। গােটাগল্পে এক অলৌকিক পরিবেশ রােমাঞ্চকর অনুভূতি জাগায়।

গল্পটি এইরকম- গল্পকথক অন্ধকারে একটা মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, “সেও সঙ্গে ছিল না। তার অঙ্গসৌরভ বলয়-নিক্কণ, নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দ সমস্তই অনুভব করেছিলেন কথক। কথকও তার অশরীরী অনুভূত প্রিয়ার সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে অনেক কথা বলে চলেছেন। কথকের মনে হচ্ছিল ‘শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে যাচ্ছে।’কথক যেন যুগ যুগ চেয়ে ফিরেছেন তার অন্তরে অনুভূত প্রিয়াকে। তাই তার প্রশ্ন ‘এত করে চাইছ যদি নিচ্ছ না কেন?’ কথক উত্তর দিলেন – ‘ধরা দিলে কই?” কথক ‘ইন্দ্রিয়ের ইন্দ্রলােকে’ প্রিয়াকে অনুভব করতে চান। কিন্তু তার প্রিয়া সেখানে ধরা দেয় না। এরপর দ্রুততর হয়ে উঠল তার নিঃশ্বাস। মনে হল খুব কাছে সরে এসেছে …… তার চোখের জল গলে পড়ল’ কথকের তা বরফের মত ঠাণ্ডা মনে হলাে। সহসা সচেতন হয়ে কথক দেখলেন বৃষ্টি পড়ছে। কথক বাড়ির দিকে চলেছেন, “সেও চলেছে। মুষলধারা নামল। ছুটছি…… সেও ছুটছে সঙ্গে সঙ্গে। সহসা অতিশয় কাছে এসে পড়ল যেন……. তার ভিজে শাড়ির স্পর্শ ” পেলেন যেন কথক। পাশাপাশি ছুটে চলেছেন, নির্জন অন্ধকার পথ পেরিয়ে দ্রুতপদে বারান্দায় উঠলেন, ‘সেও উঠল। কথক ঘরে ঢুকলেন, ‘সেও ঢুকল’। লাইটের সুইচ টিপতেই তীব্র আলােয় চতুর্দিক ভরে উঠল। কথক দেখলেন – “কেউ নেই।

গল্পের এই রহস্যময় পরিবেশ পাঠকের মনে রােমাঞ্চ জাগায়। গল্প কথকের অবচেতন মনের এই বিশেষ অনুভূতি গল্পে অলৌকিক বাতাবরণ তৈরী করেছে। সে এখানে গল্পকথকের অনুভূত অশরীরী প্রিয়া? না নির্জন প্রকৃতি চেতনতা? না প্রবহমান কালচেতনা? না বনফুলের “ইন্দ্রিয়ের ইন্দ্রিয়লােকে’ অনুভূত আত্মা? মনে হয়, এ বনফুলের অতীন্দ্রিয় দিয়ে চিরন্তন কাল প্রবাহকে ধরার, অনুভব করার প্রচেষ্টা। যা যুগ-যুগান্তর ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে চলেছে। এই কাল প্রবাহ অথ, অনন্ত, তাকে ধরা সম্ভব নয়, তা অধরা।

উক্ত গল্পের বিষয়বস্তুগুলি থেকে আমরা একটি কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি —বনফুলের ছােট গল্পের বিষয়বস্তু অফুরান, কোন একটি বিষয়ের অনুবর্তন ঘটেনি। তাঁর গল্পের বিষয় স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল – সর্বত্র প্রসারী। 

এ বিষয়ে বনফুলে অন্তরঙ্গ বন্ধু পরিমল গােস্বামী লিখেছেন “তােমার কল্পনা শক্তি বহু বিস্তারী। স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল ঘুরে আসা তোমার এক নিঃশ্বাসের ব্যাপার। তুমি যা দেখেছ যা শুনেছ তার মধ্যে যেখানেই চিত্রধর্মীতা আছে তাকে তুমি বেঁধে ফেলেছ গল্পের চেহারায়।” বস্তুতপক্ষে বনফুলের ছােটগল্পের বিষয়বস্তুর পরিধি কোন একটি বিশেষ মাত্রায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়, তার জন্য তাঁর সমগ্র ছােটগল্পই পৃথক পৃথক ভাবে আলােচনার অপেক্ষা রাখে। এখানে বনফুলের সেই বিপুল-বিচিত্র ছােটগল্পের কিঞ্চিৎ স্বাদ গ্রহণ করা গেল। আসলে বনফুলের মানব জীবন সম্পর্কে প্রতিরােধ্য সদা-‘অনুিষ্ট কৌতূহল ছিল। সারা জীবন ব্যাপী তিনি বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন, মানব জীবনের বিচিত্র রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন, যা তাঁর গল্পে বিচিত্র স্বাদের অনুভব নিয়ে এসেছে।

তাছাড়াও বনফুল সব সময় নতুন কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করতেন। এক সময় তিনি দুই ‘ পুত্রের পড়াশােনা, দুই কন্যার বিবাহ ও গাড়ি-বাড়ি কেনার জন্য বিভিন্ন সময় কিছু প্রকাশকের কাছে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন, আর সেই ঋণ পরিশােধের জন্য অবিশ্রান্ত ধারায় তিনি লিখে গেছেন। তবে আবােল-তাবােল কিছু লিখে ঋণশােধের চেষ্টা করেননি। সবসময় নতুন কিছু লেখার প্রেরণা তার মধ্যে কাজ করেছিল। এ সম্পর্কে বনফুল নিজেই বলেছেন – “ঋণশোধ করিবার তাড়নায় আমাকে অনেক বই লিখিতে হইয়াছিল- আমি অবশ্য যাতা’আবোল-তাবল লিখিয়া আমার ঋণশোধ করিতে পারিতাম। কিন্তু তাহা আমি করি নাই। আমি প্রতিটি বইতে নুতন স্বাদ পরিবেশন করিয়া ভালাে বই লিখিবার চেষ্টা করিয়াছি।”

বনফুলের লেখার প্রতি এই তীব্র আকাক্ষা ও বৈচিত্র প্রকাশের অভীপ্সা তার রচনাকে বিচিত্রস্বাদী করে তুলেছে। একথা তাঁর ছােটগল্পগুলির ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযােজ্য। মানবজীবন সম্পর্কে সদা কৌতূহলী মনােভাব এবং জীবনব্যাপী বিচিত্র অভিজ্ঞতা এবং সদা বৈচিত্র্য লিন্দু মনােধর্ম তার ছােটগল্পে বিচিত্র রামধনুর রং ছড়িয়েছে। চলমান জীবন স্রোতে বনফুল যা দেখেছেন তার থেকে যে জীবনসত্য অনুধাবন করেছেন, তাকে এক একটি গল্পে রূপ দিয়েছেন। এই বিষয়-বৈচিত্র্যর জন্যই তাঁর ছােটগল্প আমাদের কখনাে ‘ববারিং’ করে না, বরং গল্প পাঠে আরো আগ্রহ জন্মায়।

তবে শুধু বৈজ্ঞানিক মানসিকতার কারণেই নয়, মানব জীবনের প্রতি গভীর ভালােবাসায়, মমত্ববােধে মানুষের বিচিত্র জীবন সম্পর্কে বনফুল কৌতূহলী হয়ে পড়েছিলেন। এ তাঁর সচেতন অভিপ্রায়। যে কারণে তিনি শৈশবকাল থেকে নানা কীটপতঙ্গ, পাখীদের অনুসরণ করে বিচরণ করেছেন বনে-বাদারে, যৌবনের প্রথম পাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন কলকাতার পথে পথে, যে নেশা তাঁর পরিণত বয়সেও অব্যহিত ছিল। এছাড়া সমাজের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে পরিচিতি তাঁর গল্পে এক বৈচিত্র্যের আস্বাদ নিয়ে এসেছে। বনফুলের গল্পের বৈচিত্র্যময় জীবন অন্বেষণ সম্পর্কে বন্ধুবর পরিমল গােস্বামী বনফুলের গল্প সংগ্রহের প্রথম শতকের ভূমিকায় লিখেছেন – “মানুষের জীবনকে তুমি চলচ্চিত্রের মতাে দেখেছ। জীবনের স্রোত, বিচিত্র মানুষের স্রোত ভেসে চলেছে সম্মুখ দিয়ে, তুমি বসে আছি পাশে—তার এক একটি মুহূর্তকে টেনে তুলে এক একটি ছবি রচনা করবে বলে। মাছ রাঙা মাছের আশায় যেমন জল থেকে একটু উচু জায়গায় বসে থাকে, তেমনি। তোমার গল্প ধরা আর তার মাছ ধরার মধ্যে কোনাে তফাৎ নেই।

সহায়ক গ্রন্থ

বনফুলের ছােটগল্প উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ.ডি. (বাংলা) উপাধির জন্য প্রদত্ত গবেষণা অভিসন্দর্ভ

গবেষক: সুবল কান্তি চৌধুরী

তত্ত্বাবধায়ক: ড. নিখিল চন্দ্র রায় বাংলা বিভাগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

১. বাংলা ছােটগল্প’ – শিশির কুমার দাস।

২. ‘বনফুলের ছােটগল্প সমগ্র’ – চিরন্তন মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত।

৩. ‘বনফুলের ফুলবন’ – ড. সুকুমার সেন।সাহিত্যলােক।

৪. ‘বনফুলের উপন্যাসে পাখসাট শােনা যায় প্রবন্ধ—মনােজ চাকলাদার।

৫. ‘পশ্চাৎপট – বনফুল (১৬ – তম খণ্ড)।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

সমর সেন এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সমর সেন (১০ অক্টোবর ১৯১৬ – ২৩ আগস্ট ১৯৮৭) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাভাষী কবি এবং সাংবাদিক, যিনি স্বাধীনতা-উত্তর কালের ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ

Read More

শওকত আলী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

শওকত আলী (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ – ২৫ জানুয়ারি ২০১৮) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষক। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তাঁর অনন্য সাহিত্যকর্মের জন্য

Read More

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.