Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

দর্শনে ইবনে খালদুনের অবদান কি ছিলো? আলোচনা করো?

ভূমিকা : ইবনে খালদুনের প্রকৃত নাম আবদুর রহমান ওয়ালী উদ্দীন ইবনে মোহাম্মদ ইবনে খালদুন। তিনি ২৭ মে, ১৩৩২ খ্রিস্টাব্দে তিউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বংশানুক্রমে দক্ষিণ আরবের প্রসিদ্ধ কিন্দা গোত্রের লোক। ইবনে খালদুনের পিতা একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। পিতার নিকট তাঁর হাতেখড়ি হয়। বাল্যকাল থেকে তার শাণিত বুদ্ধি ও দার্শনিক প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। ইবনে খালদুন তার দক্ষতা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দেন এবং ইতিহাস , দর্শন , সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে গভীর গবেষণা করেন৷ নিম্নে দর্শনে ইবনে খালদুনের অবদান তুলে ধরা হলো:
মুল আলোচনা : ইবনে খালদুন এক নতুন ও মৌলিক দর্শনের জন্মদাতা৷ মার্কস ও বার্গর্সোর বহু পূর্বে তিনি জগতের চলমান রূপের চিত্র উপস্থাপন করেছেন। তিনি মানব ইতিহাসের এক নতুন ধারণা দিয়ে গেছেন। ইবনে খালদুনের সময় পর্যন্ত সংবেদন, প্রজ্ঞাকে জ্ঞানের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনিই প্রথমে ইতিহাসকে জ্ঞানের তৃতীয় উৎস বলে গণ্য করেন। ইসলামের শিক্ষায় ইতিহাসকে যে জ্ঞানের অন্যতম উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ইবনে খালদুনের লেখায় সর্ব প্রথম তা সমধিক গুরুত্ব লাভ করেছে। তাঁর মতে, ‘ইতিহাস রাজ-রাজাদের পরাক্রমের রোজনামচা নয় কিংবা বীরদের বীরত্বগাঁথা নয় , ইতিহাস জীবন ও কাল সম্পর্কীয় মৌলিক ধারণাসমূহের বাস্তব রূপায়ণ’৷
দর্শন সম্পর্কে তাঁর ধারণা অভিনব। তিনি অভিজ্ঞতাবাদের সমর্থক। তিনি অভিজ্ঞতাবাদী। তাঁর মতে, দর্শনের বিষয়বস্তু জীবনের অভিজ্ঞতানির্ভর ঘটনা, আধ্যাত্মিক সত্তা নয়। যা অভিজ্ঞতার আওতাভুক্ত নয় তা দর্শনের বিষয়বস্তু বলে বিবেচিত হতে পারে না। অতীতে দার্শনিকরা যে অশরীরী, আধ্যাত্মিক সত্তার কথা বলতেন তা ইন্দ্রিয় অতীত ছিল, ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল; ফলে বাস্তব জগতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। সুতরাং, জগতের বাস্তব ঘটনাপুঞ্জি ও জগতের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ঘটনাবলিই দর্শনের আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত৷
আত্মা সম্পর্কে ইবনে খালদুনের মতবাদ লকের মতবাদের অনুরূপ। তাঁর মতে , মানুষের আত্মা জন্মের সময়ে কোনোরূপ ধারণা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞানলাভ করে। বাহ্য ও আন্তর সংবেদনের সম্প্রসারণের (Elaboration) মাধ্যমেই এই জ্ঞানের অগ্রগতি সাধিত হয়। যুক্তিবিদ্যার সাহায্যে জ্ঞান উৎপাদিত হয় না। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানের উপাদানকে যুক্তিবিদ্যা সমন্বিত করে তুলতে পারে৷
মধ্যযুগের খ্রিস্টান দার্শনিকরা যেখানে ইতিহাসকে এই জগতে খোদার রাজত্ব কায়েমের প্রক্রিয়া হিসেবে গ্রহণ করেছেন সেখানে ইবনে খালদুন সর্বপ্রথম ইতিহাসকে বিজ্ঞান হিসেবে ঘোষণা করেন। ইবনে খালদুনের মতে, ইতিহাস মানবজীবনের ঘটনাবলির কার্যকারণের সম্পর্ক আবিষ্কার করে। এ কারণে ঐতিহাসিককে নিরপেক্ষ ও কুসংস্কারমুক্ত হতে হয়। ঘটনাবলির গতি নির্ধারক মৌল নিয়মাবলি জগতের সর্বত্র সমান। প্রত্যেক কাজের কারণ আছে। একই অবস্থায় একই কারণ একই কাজ উৎপন্ন করে৷ তিনিই সর্বপ্রথম বিবর্তনের বাস্তব কারণের নির্দেশ দেন, সকলের দৃষ্টি মূলের দিকে নিবদ্ধ করেন। রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও কৃষ্টিগত কারণসমূহ যে মানব সমাজের বিকাশের জন্য দায়ী এ সত্য ইবনে খালদুনের পূর্বে কেউই উপলব্ধি করতে পারেন নি। তবে পরিশেষে তিনি পরিণতিমূলক কারণ হিসেবে খোদাকে নির্দেশ করেছেন।
প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক ও পোপ শাসিত মধ্যযুগীয় ইউরোপের চিন্তাবিদদের সমালোচনায় ইবনে খালদুন বলেন যে, অনেক লোকই কিংবদন্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় তাদের অনেকেই ভুলভ্রান্তি ও অযৌক্তিক অনুমানের অধীন হয়েছেন। সমালোচনা বা ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে তাঁরা পূর্ববর্তী ঐতিহাসিকদের রচনা থেকে নির্দ্বিধায় ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা ভেবে দেখেন নি যে, কালের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জাতির অবস্থা ও রীতিনীতির পরিবর্তন সাধিত হয়।
ইবনে খালদুনের ইতিহাস মানব সভ্যতা সম্পর্কে এক মৌলিক রচনা। তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘মুকাদ্দমার’ প্রথমে তিনি সমাজ ও সভ্যতার সমগ্র রূপ সম্পর্কে আলোচনা করেন। এতে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর আলোচনা স্থান পেয়েছে। তিনি বলেছেন মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া মানুষের চলে না। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ পরস্পরের সহযোগিতা ও সংঘবদ্ধতার আবশ্যকতা বোধ করে৷
উপসংহার : ইবনে খালদুন নিজের পদ্ধতি সীমা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন । তাঁর আশা ছিল তার পরে যারা আসবেন তাঁরা এই পদ্ধতির পরিপূর্ণতা দান করবেন । তাঁর আশা পূর্ণতা লাভ করেছে । কার্ল মার্কসের বস্তুবাদ (লেলিন ও এঙ্গেল যার পূর্ণতা দান করেছেন) ইবনে খালদুনের প্রকল্পের নৈয়ায়িক পরিণতি। সমাজতন্ত্রের মূল সূত্র আবিষ্কার এবং তাঁর সাহায্যে ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহকে বিচার করার পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ইবনে খালদুন যে ইতিহাস দর্শনের সৃষ্টি করেন, অধ্যাপক টোয়েনবির মতে, ‘অদ্যাবধি তা যে কোনো দেশের যে কোনো কালের মানবীয় মননশক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়’৷ ফলে আমরা বলতে পারি দর্শনে ইবনে খালদুনের অবদান অপরিসীম।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.