Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৮ টি পত্র পত্রিকা

বিশ শতকের পত্র পত্রিকা : সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে এমন বিশ শতকের পত্র পত্রিকা গুলো হলো : ‘সবুজ পত্র’, ‘প্রবাসী ও ভারতবর্ষ’, ‘কল্লোল’, কালিকলম, ‘মোসলেম ভারত’, ‘ধূমকেতু’, ‘শিখা’, প্রভৃতি।

সবুজ পত্র : প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজ পত্র’ বিশ শতকের বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । ১৯১৪ সালে সবুজ পত্রের প্রথম প্রকাশ ঘটে । সবুজ পত্র প্রকাশকালে সম্পাদকের উদ্দেশ্য ছিল , আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভোরের পাখিরা যদি আমাদের প্রতিষ্ঠিত সবুজ পত্র মণ্ডিত সাহিত্যের নব শাখার ওপর এসে অবতীর্ণ হন , তাহলে আমরা বাঙালি জাতির সবচেয়ে যে বড় অভাব , তা কতকটা দূর করতে পারব? সে অভাব হচ্ছে আমাদের মনের ও চরিত্রের অভাব যে কতটা , তারি জ্ঞান । একটা নতুন কিছু করবার জন্য নয় , বাঙালির জীবনে যে নতুনত্ব এসে পড়েছে , তাই পরিষ্কার করে প্রকাশ করবার জন্য সবুজ পত্রের প্রতিষ্ঠা।

রবীন্দ্রনাথ সবুজ পত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলেন । প্রমথ চৌধুরী বীরবলী রীতি নামে যে মৌখিক ভাষারীতি সাহিত্যে প্রচলন করে যুগান্তর এনেছিলেন তার প্রচারের মাধ্যম ছিল এই সবুজ পত্র । পত্রিকাটি বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিকদের কেন্দ্রস্বরূপ বিবেচিত হয় । সবুজ পত্র পত্রিকাটি বিশ শতকের সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রমথ চৌধুরী নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিশালী গদ্য লেখক ও নতুন একটি রীতির স্রষ্টা। সবুজ পত্র এই নতুন গদ্যরীতির বাহন ছিল৷

প্রবাসী ও ভারতবর্ষ : এই সময়কার অন্য দুটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ‘প্রবাসী ‘ (১৯০১) ও ‘ভারতবর্ষ’ (১৯১৩) ছিল গণসেব্য পত্রিকা— নানা রকমের পাঠকের বিচিত্র চাহিদা মেটানোর প্রয়াসে তাদের আয়তন বিপুল , সূচি বিচিত্র , আদর্শ পাঁচমিশালী , সাধনা প্রসারমুখী , সিদ্ধি অর্থঘটিত । প্রবাসীর সম্পাদক ছিলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় । রবীন্দ্রনাথের অজস্র রচনা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল৷  শরঙ্কন্দ্রের আত্মপ্রকাশে এই পত্রিকার অবদান গুরুত্বপূর্ণ ।

কল্লোল : ‘কল্লোল’ সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিশিষ্ট পত্রিকা । দীনেশরঞ্জন দাসের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে এই মাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি অতি আধুনিক লেখকগোষ্ঠীর মুখপত্র হিসেবে ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় । তৎকালীন তরুণ লেখক রবীন্দ্র বিরোধিতার নাম করে এখানে সমবেত হয়েছিলেন। কল্লোল প্রায় সাত বছর চলেছিল , কিন্তু এই অল্প সময়েই একটা প্রগতিশীল লেখকগোষ্ঠীর সমাবেশ ঘটাতে পেরেছিল । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তার “কল্লোল যুগ” গ্রন্থে এই সময়কার সাহিত্যচক্রের উপাদেয় বর্ণনা দিয়েছেন । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত , মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় , প্রেমেন্দ্র মিত্র , বুদ্ধদেব বসু , কাজী নজরুল ইসলাম , মোহিতলাল মজুমদার প্রমুখ অনেকেই কল্লোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছিলেন৷ এই লেখকেরা তৎকালীন ইউরোপীয় আদর্শে বাস্তব জীবন, মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিষয়কে তাদের রচনার উপজীব্য করলেন । যা বিশ শতকের সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নে অপরিসীম ভুমিকা পালন করেছিল।

কালিকলম : কল্লোলের আদর্শে কলকাতা থেকে ১৯২৬ সালে ‘কালিকলম’ এবং ঢাকা থেকে ১৯২৭ সালে ‘প্রগতি’ সাহিত্য পত্র প্রকাশিত হয়েছিল । রবীন্দ্র প্রভাব থেকে দূরে থেকে বাস্তবতাপ্রধান সাহিত্যসৃষ্টির দিকে এসব পত্রিকার লেখকদের প্রধান লক্ষ্য ছিল । নতুন ভাষারীতি , রচনারীতি ও সাহিত্যাদর্শ সৃষ্টিতে সাময়িক পত্রের অবদান চিরদিন স্বীকৃতি লাভ করেছে। সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নেও এই পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য।

মোসলেম ভারত : ‘মোসলেম ভারত’ ১৯২০ সালে কলকাতা থেকে মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় মাসিক সাহিত্যপত্র হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয় । বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিখ্যাতি লাভের পশ্চাতে এই পত্রিকার বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল । সমকালীন খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকগণের রচনা এতে প্রকাশিত হত ।

ধূমকেতু : ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা অর্ধ সাপ্তাহিক হিসেবে ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় । ধূমকেতুর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল : ‘ … এ দেশের নাড়ীতে নাড়ীতে অস্থি – মজ্জায় যে পচন ধরেছে তাতে এর একেবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না।… দেশের যারা শত্রু , দেশের যা কিছু মিথ্যা , ভণ্ডামী , মেকি তা সব দূর করতে ‘ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনী । পত্রিকাটির জন্য ‘আশীর্বাণী’ পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , বারীণ ঘোষ প্রমুখ অনেকে । কবিগুরুর আশীর্বাণীটি ছিল এ রকম :

আয় চলে আয় , রে ধূমকেতু,

আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,

দুর্দিনের এই দুর্গশিরে

উড়িয়ে দে তোর বিজয় – কেতন ।

সে যুগের উত্তাপ উত্তেজনা ধূমকেতুতে প্রতিফলিত হয়েছিল বলে পত্রিকাটি আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সকলের হৃদয় জয় করে নিয়েছিল । এর জ্বালাময়ী সংবাদ ও সম্পাদকীয় প্রবন্ধাবলী একদিকে যেমন জনগণের মধ্যে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল , অন্যদিকে তেমনি তকালীন ইংরেজ শাসকের রোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । এই পত্রিকায় রাজদ্রোহমূলক কবিতা প্রকাশের জন্য কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন । নজরুল ইসলামের নিজস্ব অবদানের জন্য সে যুগে ধূমকেতু ছিল একটি অনন্য পত্রিকা ।

শিখা : ‘শিখা’ ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র হিসেবে ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় । সম্পাদক ছিলেন আবুল হোসেন । ঢাকার সাহিত্যিক গোষ্ঠী ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের সূত্রপাত করেন । ‘শিখা’ ছিল বার্ষিক পত্র । পর পর পাঁচ বছর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল । শিখার প্রধান উদ্দেশ্য বর্তমান মুসলমান সমাজের জীবন ও চিন্তাধারার গতির পরিবর্তনসাধন। পত্রিকার পরিচালকেরা মনে করতেন , ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ , বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট , মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। শিখার রচনাবলীতে এই আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছিল বলে পত্রিকাটি সে আমলে বিশেষ  সাড়া জাগিয়েছিল।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ জুন ১৯২২) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কবি, যাঁর কবিতা এবং ছড়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর জন্ম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.