Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বাংলা সাহিত্যে উনিশ শতকের পত্র পত্রিকার অবদান

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সাময়িক পত্রের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা গদ্য তথা সমগ্র বাংলা সাহিত্যের পরিপুষ্ট সাধনে এই সাময়িক পত্র নানা ভাবে ভুমিকা পালন করে আসছে।“প্রয়োজনের টানে আভিধানিক শব্দাবলি হয়ে ওঠে মসৃণ, কেটে যায় ভাষার আরষ্টতা”।তাই সাময়িক পত্রের ব্যাপক প্রচলনের ফলশ্রুতি হিসেবে বাংলা গদ্য সাহিত্যে এসেছে নমনীয়তা, বৃদ্ধি পেয়েছে শব্দভাণ্ডার এবং সকল কাজে ব্যবহার যোগ্যতা দেখা দিয়েছে। গদ্যের বিকাশের জন্য সাময়িক পত্রের আবশ্যকতা, তেমনি সাময়িক পত্রের জন্য দরকার ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ গদ্য সাহিত্য সৃষ্টি। নিম্নে বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে সাময়িক পত্রের অবদান তুলে ধরা হলো:

মূল আলোচনা : বাংলা গদ্য গঠনে যারা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন তারা প্রায় সবাই সাময়িকপত্র বা সংবাদপত্র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাঙালিকে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও সংস্কৃতিতে শিক্ষা দানের ব্যাপারে সাময়িকপত্র গুলোর দাম ছিল যথেষ্ট।

সাময়িক পত্রের দুটি প্রধান উদ্দেশ্যের কথা গোপাল হালদার উল্লেখ করেছেন৷ ‘এক , শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য । বাংলা সংবাদপত্র জ্ঞানবিজ্ঞানের তথ্য বাংলা ভাষায় জুগিয়ে সমাজের চেতনাকে প্রসারিত করেছে । দুই , ভাষা ও সাহিত্য গঠন । যে আটপৌঢ়ে বাংলা গদ্য গড়ে না উঠলে সামাজিক চেতনা আত্মপ্রকাশের পথ পায় না সে গদ্যগঠনে পত্র পত্রিকাই সর্বাপেক্ষা ভূমিকা পালন করেছে’৷

আনিসুজ্জামান এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন , ‘বাংলা গদ্যের বিকাশে , সাহিত্যের নতুন আঙ্গিক প্রবর্তনে সামাজিক ভাব-আন্দোলনের সৃষ্টিতে রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চারে এবং সাহিত্য সংস্কৃতিগত রুচি নির্মাণে সাময়িক পত্রের দান অপরিসীম’৷

পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান থেকে প্রকাশিত হয়। ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড থেকে বের হয় বিশ্বের প্রথম দৈনিক পত্রিকা। ভারতের প্রথম সংবাদপত্র ইংরেজি ভাষায় কলকাতা থেকে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জানুয়ারি প্রকাশিত হয়; নাম- ‘বেঙ্গল গেজেট’।সম্পাদক : জেমস অগাস্টাস হিকি।

তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে মাদ্রাজ পরে অন্যান্য স্থানে পত্র পত্রিকার প্রথম সেন্সর প্রথা চালু করে। বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ খুবই উল্লেখযোগ্য। কারণ এবছর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এগুলো হলো : ‘দিকদর্শন’ ‘সমাচার দর্পণ’ ‘বাঙ্গাল গেজেট’।নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

বেঙ্গল গেজেট : ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে জানুয়ারি কলকাতা থেকে প্রকাশিত ভারতের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র জেমস অগাস্টাস হিকি সম্পাদিত ‘বেঙ্গল গেজেট’ পত্রিকাটিতে মূলত বিজ্ঞাপন, বিদেশি ইংরেজি পত্রিকা থেকে উদ্ধৃতি , সংবাদদাতাদের বিবরণধর্মী লেখা ছাপা হতো । ‘পোয়েটস্ কর্নার’ বলে একটি বিশেষ অংশ ছিল । প্রকাশের প্রথম মাস দশেক কোন রাজনৈতিক বিষাদপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয় নি । পরে প্রশাসনের বিপক্ষে কিছু লেখা বের হলে ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ই নভেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ডাকঘর মারফত পত্রিকা বিতরণ বন্ধ করা হয় । পরে হিকি মামলায় জড়িয়ে পড়েন । ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে হিকির ছাপাখানা আটক ও বিক্রি করে দেওয়া হলে ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্রের অপমৃত্যু ঘটে।

দিগদর্শন : ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বাংলা মাসিকপত্র হিসেবে হুগলি জেলার শ্রীরাম পুর মিশনারিদের পক্ষ থেকে ‘ দিন্দর্শন প্রকাশিত হয় । এর সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান । সংবাদ অপেক্ষা ধর্মীয় নীতিকথা ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তথ্য পরিবেশনই এখানে প্রাধান্য পেতো । ২৬ টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে এই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়।দিগদর্শন সংবাদপত্র ছিল না , ছিল নীতি – ধর্ম তত্ত্বমূলক মাসিক সাময়িকপত্র ।

সমাচার দর্পণ : ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে হুগলির শ্রীরাম পুর খ্রিষ্টান মিশনারিরা ‘সমাচার দর্পণ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করে । পত্রিকাটি চলে ১৮৪০ পর্যন্ত । এর সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান । মার্শম্যান বিশেষ লিখতেন না , লিখতেন বাঙালি হিন্দু পণ্ডিতরা । এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জয়গোপাল তর্কালঙ্কার । সংবাদই এর প্রাণ ছিল । তবে ধর্ম বা তত্ত্ব আলোচনাও থাকত । এই পত্রিকা কোনো ধর্মীয় বিতর্কে না জড়িয়ে খ্রিষ্টান মতবাদের প্রতি পক্ষপাত দেখাত। সমাচার দর্পণের ভাষায় সারল্য , লেখায় তথ্যবোধ ও মাত্রাজ্ঞান লক্ষযোগ্য ।

সম্বাদ প্রভাকর : ‘সম্বাদ প্রভাকর’ সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হিসেবে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে জানুয়ারি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন এর সম্পাদক , তাঁর সহকারী ছিলেন পাথুরিয়াঘাটার যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুর । পত্রিকাটির স্বভাব এমন স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থক , পাশ্চাত্যমুখী বাবুকালচার বিরোধী, নারী স্বাধীনতার পক্ষে নয় । এ পত্রিকা বছর দেড়েক স্থায়ী ছিল । ১৮৩৬ ঈশ্বর গুপ্তের সম্পাদনাতেই পত্রিকাটি আবার প্রকাশিত হয় বারত্রয়িক ( অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ) রূপে । এ পত্রিকাই ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ই জুন দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে । সম্বাদ প্রভাকর ‘ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা হবার গৌরবমাল্য পায় । ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে জানুয়ারি ঈশ্বর গুপ্ত মারা গেলে তার সহোদর রামচন্দ্র গুপ্ত পত্রিকার সম্পাদনার ভার নেন।

সম্বাদ কৌমুদী : ভারতীয় জাতীয় জাগরণের লক্ষ্যে রামমোহন রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতা থেকে ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ঠা ডিসেম্বরে ‘ সম্বাদ কৌমুদী ‘ প্রকাশিত হয় । এর সম্পাদক ছিলেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রকাশক তারাচাঁদ দত্ত । সামাজিক হিন্দুধর্মীয় রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে উদার মনোভাব নিয়ে এ পত্রিকা লেখনী ধারণ করে । ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয় ।

তত্ত্ববোধিনী : তৎকালের উদার , বিজ্ঞানমনস্ক দেশসচেতন পত্রিকা বললে প্রথমেই আসে ‘ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার নাম । ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ই অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ তত্ত্ববোধিনী সভা ‘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান । সাংস্কৃতিক জীবনকে জাতীয় ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বাহ্যবস্তুর জিজ্ঞাসাকে মুখ্য করে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে । রামমোহনের মৃত্যুর পর স্তিমিত হয়ে যাওয়া ব্রাহ্মসমাজকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় বেগবান করেন । এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মসমাজের সভায় অনুপস্থিত সভ্যদের লক্ষ্য করে , আলোচিত বিষয় তাদের সম্মুখে উপস্থিত করার জন্য ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। এ পত্রিকার সম্পাদক হন- অক্ষয়কুমার দত্ত । এখানেই প্রথম ‘ গ্রন্থাধ্যক্ষগণ ’ ( আজ যাকে সম্পাদকমণ্ডলী বলে ) নির্বাচিত হন এবং সম্পাদক নয় , গ্রন্থাধ্যক্ষগণের মনোনীত রচনাই প্রকাশ করা হয় । দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক লেখা সে কারণে এ পত্রিকায় প্রকাশিত হতে পারে নি । অসুস্থতার জন্য সম্পাদক পদ থেকে অক্ষয়কুমার অবসর নিলে ( ১৮৫৫ ) পত্রিকার সম্পাদক হন ঈশ্বরচন্দ্র।

জাতীয় জীবনের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশিষ্ট মাধ্যম হিসেবে সাময়িক পত্রের অবদান কম ছিল না। নতুন ভাষারীতি , রচনারীতি ও সাহিত্যাদর্শ সৃষ্টিতে সাময়িক পত্রের অবদান চিরদিন স্বীকৃতি লাভ করেছে । বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসের প্রথম থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ভাষা ও সাহিত্য গঠনে এদের গুরুত্ব লক্ষ করা যায়।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

"সোজন বাদিয়ার ঘাট" কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

“সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস

ভূমিকা: বাংলা কাব্যের ভুবনে বাংলাদেশের মানসকবি জসীম উদদীনের (১৯০৩-১৯৭৬) আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকে। তিনি রবীন্দ্র-নজরুল ও তিরিশের কবিদের বলয় ও প্রভাব মুক্ত থেকে কবিতায় এক নতুন ও ব্যতিক্রম স্বর সৃষ্টি করেছেন। সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) কবি জসীম উদদীনের দ্বিতীয় আখ্যান কাব্য। সমকালীন কবিরা যেখানে প্রায় সকলেই নগরচেতনা, নাগরিক জীবন ও আচার-আচরণ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তুলে এনেছেন, জসীম উদদীন সেখানে তার কবিতায় আবহমান বাংলার প্রকৃতি, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন-চিত্রকেই আন্তরিক নিষ্ঠা, অকৃত্রিম ভালবাসা ও দরদ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কবির বিকল্প জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাসধর্মী রচনা। এ কাব্যে প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। নিম্নে … “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যের শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ও কবিমানস ১. অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যে অসাম্প্রদায়িকতা দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। এ আখ্যান কাব্যে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও তৎকালীন পরিবেশ ও ঘটনা পরিক্রমায় লিখিত। আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল/গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের একত্রে বসবাস, সম্প্রীতির পরিচয় আছে। বিভিন্ন কারণে দুই ধর্মের মধ্যে মারামারী ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যায়। কবি এরূপ বর্ণনায় অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চরম নিরপেক্ষতার বর্ণনা দিয়েছেন। “নমু পাড়ায় পূজা পরব, শঙ্ক কাঁসর বাজে, … মুসলমানের পাড়ায় বসে ঈদের মহোৎসবে,” ২. প্রেমভাবনা ও সমাজভাবনা দুইই পরস্পরের পরিপূরক: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যেপন্যাসের প্লট নির্মিত হয়েছে মুসলমান চাষীর ছেলে সোজন আর হিন্দু নমুর মেয়ে দুলীর অপূর্ব প্রেমের কাহিনীকে ঘিরে; তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিগত সামন্ত যুগের জমিদারি প্রথার নিষ্ঠরতার আলেখ্য। গ্রামের হিন্দু বালিকা দুলীর সাথে মুসলমানের ছেলে সোজনের আবল্য বন্ধুত্ব। বন্ধু থেকে আস্তে আস্তে প্রেমে পরিণত হয়। কবিতায়- “নমুদের মেয়ে আর সোজনের ভারি ভাব দুইজনে, লতার সঙ্গে গাছের মিলন, গাছের লতার সনে।“ প্রেমের তুলনায় সমাজ অতিমাত্রায় কাব্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কাব্যে সামাজিক অনুষঙ্গের উপস্থাপন করেছেন কবি। কবিতাতে তিনি সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষকে আসার আহ্বান করেছেন। সমাজের মানুষের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, খেলাধুলা প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায় কাব্যটিতে। দুলির মায়ের কণ্ঠে সমাজের রূঢ় রূপটি প্রকাশ পায়- “পোড়ারমুখীলো, তোর জন্যেত পাড়ায় যে ঠেকা ভার, চূণ নাহি ধারি এমন লোকেরো কথা হয় শুনিবার!” ৩. জীবনবোধ, জীবনপদ্ধতি এবং জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রচনা: কবি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে। শহরজীবনে বসবাস করলেও তিনি পল্লিগীতির সংগ্রাহক হিসেবে গ্রামে কাজ করেছেন। ফলে তিনি মানুষের সাথে মিশতে পেরেছেন এবং তাঁর জীবনবোধ ও জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাঁর জীবনপদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বড় কবিতার ধারক হিসেবেই তিনি পরিচিত। ৪. উপন্যাসধর্মী রচনা: “সোজন বাদিয়ার ঘাট” একটি উপন্যাসধর্মী রচনা। কাব্যের কবিতাগুলো জসীম উদদীন উপন্যাসের ঢংয়ে লিখেছেন। এ যেন লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। ৫. মৌলিক রচনাধর্মী ও অনন্য: অন্যেরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় সম্পর্কিত কাহিনী থেকে নিয়েছেন। কিন্তু কবি জসীমউদ্দীন কাহিনী নিয়েছেন ঘর থেকে, গ্রাম থেকে, পল্লী গ্রাম-বাংলা থেকে। এখানে তিনি মৌলিক ও অনন্য। ৬. আধুনিকতা ও উদারনীতির বৈশিষ্ট্য: সময়কে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে স্বীকার করে নিয়ে লেখা আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতের কল্যাণকামনা করে মানবিক হওয়াও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। এসবের সংমিশ্রণে জসীম উদদীন কবিতায় অবয়ব দিয়েছেন। হিন্দু কিশোরী দুলালী বা দুলী ও মুসলমান কিশোর সুজনের প্রেম নিয়ে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যায়। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জসীমউদ্দীন লিখলেন- এক গেরামের গাছের তলায় ঘর বেঁধেছি সবাই মিলে . . . এক মাঠেতে লাঙল ঠেলি, বৃষ্টিতে নাই, রৌদ্রে পুড়ি সুখের বেলায় দুখের বেলায় ওরাই মোদের জোড়ের জুড়ি। ৭. চরিত্র নির্মাণে দক্ষতা: ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যে লেখক চরিত্রের আমদানি করেছেন, চরিত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং চরিত্রের পরিণতি দেখিয়েছেন। চরিত্র যেন অনুভূতির মাধ্যমে কথা বলছে। তিনি চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহারেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ৮. কাহিনী ও ভাষা বিন্যাসে পাণ্ডিত্য: কাহিনী বিন্যাসে, ভাষা ব্যবহারে এবং উপমা-চিত্রকল্পে তার রচনায় লোক-কাব্য, পুঁথি-সাহিত্য, লোক-সঙ্গীতের কিছু প্রভাব রয়েছে। লোকজ উপাদানের ব্যবহার থাকলেও আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কম; প্রায় নেই বললেই চলে। এখানেও জসীমের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ৯. ছন্দ ও অলঙ্কারের প্রয়োগ: আধুনিক কবিতায় অলঙ্কারের প্রয়োগ লক্ষণীয়। কবি জসীমউদ্দীন কবিতায় উপমা-উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি ও অন্যান্য অলঙ্কারের যুতসই ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়। তার অলঙ্কারের বেশিরভাগ উপাদানই লোকজ।

Read More
কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলার বংশ পরিচয় কী?

কপালকুণ্ডলা: বাংলা সাহিত্যের একটি চরিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার

Read More

Keto Diet Recipes

Keto for Beginners: A Simple 7-Day Meal Plan The ketogenic (keto) diet has taken the health and wellness world by storm, promising weight loss, increased

Read More
শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা কোন ধরনের নাটক?

শর্মিষ্ঠা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি রচিত হয় ১৮৫৯ সালে। নাটকটি মহাভারতের কাহিনীকে উপজীব্য করে পাশ্চাত্য রীতিতে রচিত হয়। নাটকটির কাহিনী মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.