Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

সৈয়দ আলী আহসান এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সৈয়দ আলী আহসান (২৬ মার্চ ১৯২২ – ২৫ জুলাই ২০০২) বাংলাদেশের এক অনন্য সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। তাঁর জন্ম মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তিনি পুরোনো ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স (এসএসসি) এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে এফএ (এইচএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (বিএ) এবং স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি লাভের পর কলকাতায় চলে যান। কলকাতায় তিনি বিবাহিত হন এবং সেখানে অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্রে এবং রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে কর্মসূচি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন সৈয়দ আলী আহসান। ১৯৫৩ সালে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৬০ পর্যন্ত এই পদে থাকেন। এরপর বাংলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৬০-১৯৬৭)। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন।

গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব

সৈয়দ আলী আহসান বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৭-৭৮ সালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও ধর্ম সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। সুইডেনের নোবেল কমিটির সাহিত্য শাখার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৯ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং সেই বছরেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে সৈয়দ আলী আহসান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন এবং “চেনাকণ্ঠ” ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধের গান ও ভাষণ জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।

সাহিত্যকর্ম

সৈয়দ আলী আহসানের কবিতা সমকালীন কবিদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সমন্বিত নয়, তবে তাঁর রচনায় ঐতিহ্য-চেতনা, সৌন্দর্যবোধ এবং স্বদেশপ্রীতি বিদ্যমান। তাঁর কবিতার বিশেষত্ব হলো বিমূর্ত উপমার ব্যবহার, যা পাঠককে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেয়। তাঁর ‘একক সন্ধ্যায় বসন্ত’ কাব্যগ্রন্থের গদ্য-কবিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ গ্রন্থের “প্রার্থনা” ও “আমার পূর্ববাংলা” কবিতা তাঁর কবি প্রতিভার উদাহরণ হিসেবে পরিচিত।

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ

সৈয়দ আলী আহসানের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • কাব্যগ্রন্থ:
    • অনেক আকাশ (১৯৬০)
    • একক সন্ধ্যায় বসন্ত (১৯৬২)
    • সহসা সচকিত (১৯৬৮)
    • উচ্চারণ (১৯৬৮)
    • আমার প্রতিদিনের শব্দ (১৯৭৩)
    • প্রেম যেখানে সর্বস্ব
  • প্রবন্ধ গ্রন্থ:
    • বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (১৯৫৬)
    • কবিতার কথা (১৯৫৭)
    • কবিতার কথা ও অন্যান্য বিবেচনা (১৯৬৮)
    • আধুনিক বাংলা কবিতা : শব্দের অনুষঙ্গে (১৯৭০)
    • রবীন্দ্রনাথ : কাব্য বিচারের ভূমিকা (১৯৭৩)
    • মধুসূদন : কবিকৃতি ও কাব্যাদর্শ (১৯৭৬)
    • আধুনিক জার্মান সাহিত্য (১৯৭৬)
    • যখন কলকাতায় ছিলাম (২০০৪)
  • অনূদিত গ্রন্থ:
    • ইকবালের কবিতা (১৯৫২)
    • প্রেমের কবিতা (১৯৬০)
    • ইতিহাস (১৯৬৮)
    • রাজা ইডিপাস
  • ইসলামি গ্রন্থ:
    • মহানবী
    • আল্লাহ আমার প্রভু
  • অন্যান্য গ্রন্থ:
    • যখন সময় এলো
    • রক্তাক্ত বাংলা
    • পাণ্ডুলিপি
    • বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা
    • রজনীগন্ধা
    • চর্যাগীতিকা
    • আমাদের আত্মপরিচয় এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ (১৯৭৫)
    • বাংলাদেশের সংস্কৃতি
    • কবি প্রতিভার মূল্যায়ন

পুরস্কার ও সম্মাননা

সৈয়দ আলী আহসানের সাহিত্যকর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৮)
  • দাউদ পুরস্কার (১৯৬৯)
  • শেরে বাংলা পুরস্কার
  • সুফি মোতাহার হোসেন স্বর্ণপদক (১৯৭৬)
  • একুশে পদক (১৯৮২)
  • নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮৫)
  • মধুসূদন পুরস্কার (১৯৮৫)
  • স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭)
  • জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্তি (১৯৮৯)
  • ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার (২০০১)
  • কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর, ২০০৩)

সৈয়দ আলী আহসান বাংলা সাহিত্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম, এবং তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও পাঠক ও গবেষকদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা রাখে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

সমর সেন এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সমর সেন (১০ অক্টোবর ১৯১৬ – ২৩ আগস্ট ১৯৮৭) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাভাষী কবি এবং সাংবাদিক, যিনি স্বাধীনতা-উত্তর কালের ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ

Read More

শওকত আলী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

শওকত আলী (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ – ২৫ জানুয়ারি ২০১৮) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষক। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তাঁর অনন্য সাহিত্যকর্মের জন্য

Read More

লােকসাহিত্য কাকে বলে?

লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে

Read More

সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য কী? বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো!

সাহিত্য: ‘সাহিত্য’ শব্দটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে সহিত শব্দের অর্থ- হিত সহকারে বা মঙ্গলজনক অবস্থা। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.