মমতাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর তার পরিবার পূর্ববঙ্গে চলে আসে। তার পিতা ছিলেন কলিমুদ্দিন আহমদ ও মাতা সখিনা বেগম। প্রাথমিক শিক্ষা আইহো জুনিয়র স্কুলে শেষ করার পর, ১৯৫১ সালে তিনি ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
মমতাজউদ্দীন আহমদ একজন প্রখ্যাত নাট্যকার ও শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি তার শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও নাট্যকলার শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬-৭৮ সালে তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি ঢাকা কলেজের প্রথম মুসলিম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
সাহিত্যকর্ম
মমতাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তার নাটকগুলোতে সমসাময়িক সমাজের সমস্যা, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ফুটে উঠেছে। তার রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (১৯৭১)
- কি চাহ শঙ্খ চিল (১৯৮৫)
- প্রেম বিবাহ সুটকেশ
- রাজা অনুস্বরের পালা
- রঙ্গপঞ্চাদশ
- বকুল পুরের স্বাধীনতা
তাঁর রচনাসমগ্রে নাটক ছাড়াও রয়েছে গবেষণা ও প্রবন্ধ, গদ্য রচনা এবং উপন্যাস।
রাজনৈতিক জীবন
মমতাজউদ্দীন আহমদ ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন।
সম্মাননা ও পুরস্কার
মমতাজউদ্দীন আহমদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য তিনি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬)
- একুশে পদক (১৯৯৭)
- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিশেষ সম্মাননা (২০০৮)
মমতাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের সাহিত্য ও নাট্যকলায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার অবদান বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছে এবং তার সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। ২০১৯ সালের ২ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তার রচনাসমগ্র ও অবদান আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।